Khanakul

বরাত শেষের পরেও ফেরিঘাট চালানোয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

গ্রামবাসী গণেশ সাঁতরা, রবীন্দ্রনাথ চোংদার, আশিক আলির অভিযোগ, গত ডিসেম্বর মাসে ফেরিঘাটের মেয়াদ শেষের পর থেকে বেআইনি ভাবে ঘাট চালাচ্ছেন সুব্রত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ০৮:৪০
Share:

খানাকুল-২ ব্লকের মুচিঘাটা ফেরিঘাট। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

বরাত শেষ হওয়ার পরও ফেরিঘাট চালানোর অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। ‘বেনিয়ম’-এর এই কাজ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হল দলের একাংশ। খানাকুল-২ ব্লকের মুচিঘাটা ফেরিঘাট থেকে সুব্রত আদক নামে ওই তৃণমূল নেতা লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মস্মাৎ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। পুরো বিষয়টির তদন্তের দাবিতে সম্প্রতি মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্র জমা দেওয়া হল।

Advertisement

অভিযোগ মানতে চাননি সুব্রত। তবে এ বিষয়ে মহকুমাশাসক সুভাষিণী ই বলেন, ‘‘বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ খানাকুল-২-এর যুগ্ম বিডিও অনিত নন্দী বলেন, “ইজারা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।”

গ্রামবাসী গণেশ সাঁতরা, রবীন্দ্রনাথ চোংদার, আশিক আলির অভিযোগ, গত ডিসেম্বর মাসে ফেরিঘাটের মেয়াদ শেষের পর থেকে বেআইনি ভাবে ঘাট চালাচ্ছেন সুব্রত। এই পাঁচ মাসে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব লুঠ হওয়া সত্ত্বেও পঞ্চায়েত সমিতি বা ব্লক প্রশাসন ফেরিঘাট নতুন করে ডাকের কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। ফেরিঘাটের ডাক না হলে, বিনা পয়সায় পারাপারের ব্যবস্থা করা হোক বলে তাঁদের দাবি।

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা রাজহাটি ২ পঞ্চায়েতের সদস্য অলোককুমার শাসমলের ক্ষোভ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির আয় না বাড়িয়ে ঘাট মালিককে লুটের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। সেই ধন্দ মেটাতেই মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।” তৃণমূল ব্লক সভাপতি অনুপ মাইতি বলেন, “ফেরিঘাট পারাপারের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। প্রশাসনকে বলা হয়েছে, তদন্ত করে টাকা আদায় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

অভিযুক্ত ফেরিঘাটের মালিক তথা তৃণমূলের প্রাক্তন পলাশপাই-২ অঞ্চল সভাপতি সুব্রত আদক বলেন, “বরাত শেষ হওয়ার পর ব্লক প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ফেরিঘাট চালাচ্ছি। তবে তিন মাস অন্তর যে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা দিতে পারিনি। আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছি।” তাঁর দাবি, গত বন্যায় বেহাল কাঠের সাঁকো মেরামত করতে তাঁর ৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা সরকারি স্তরে পাওয়ার উপায় নেই। সেই লোকসান সামলে টাকা জোগাড়ে দেরি হয়েছে।

কীসের ভিত্তিতে ঘাট চালাচ্ছেন? কত টাকা বাকি আছে?

ইজারাদার জানান, এক বছরের জন্য ২৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ১০০ টাকায় বরাত নেওয়া হয়েছিল ফেরিঘাট। কংক্রিটের স্থায়ী সেতু না হওয়া পর্যন্ত ব্লক প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করা হয়, পুরো ১ বছরের জন্য বরাত না ডেকে এই কয়েক মাস তাঁকেই চালাতে দেওয়া হোক। আগের দরের হিসাব অনুযায়ী তিনি আগামী জুন মাস পর্যন্ত তিন মাস অন্তর টাকা জমা দেবেন। মাস পিছু ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৪২৫ টাকা করে হিসাবে জানুয়ারি থেকেই তাঁর টাকা বাকি আছে বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর।

খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতিরপলাশপাই ১ ও ২ পঞ্চায়েতের মাঝ দিয়ে যাওয়া মুণ্ডেশ্বরী নদীর শাখা হুড়হুড়া খালের উপর ওই ফেরিঘাট হাওড়ার সঙ্গে খানাকুলের দু’টি ব্লক তথা আরামবাগ মহকুমার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। ইজারাদার সেই খালের উপর কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে পারাপার করান। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ হচ্ছে ২০১৬ সাল থেকে। সংযোগকারী রাস্তা ইত্যাদির সমস্যা মিটিয়ে সেই স্থায়ী সেতুর কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন