Jute Mill

বরাত নেই, ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছে হুগলির চটশিল্প

গত ৯ ডিসেম্বর থেকে পনেরো দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস ও ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস জুট মিলে। নোটিসে বরাত না থাকার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:

বন্ধ গ্যাঞ্জেস জুট মিল। বাঁশবেড়িয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সিঁদুরে মেঘ!

Advertisement

কম বরাতের জন্য অনেক মিলেই কাজের সময় কাটছাঁট করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। এ ভাবেই চলছিল। কেন্দ্রের বরাত আরও কমে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে এ বার সাময়িক ভাবে বন্ধ হল হুগলি জেলার দু’টি জুট মিল। ফলে সেখানকার শ্রমিকেরা সমস্যায় পড়েছেন। ওই দুই মিল কর্তৃপক্ষের সুরেই অন্যান্য মিলের তরফেও বলা হচ্ছে, বরাতের অভাবে তৈরি চটের বস্তায় গুদাম উপচে যাচ্ছে। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে একই রাস্তায় তাঁদেরও হাঁটতে হতে পারে।

গত ৯ ডিসেম্বর থেকে পনেরো দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস ও ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস জুট মিলে। নোটিসে বরাত না থাকার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। শিল্পের সঙ্কটের কথাও জানানো হয়েছে। বিভিন্ন মিল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তৈরি মাল জমে যাওয়ায় টাকার লেনদেনও হচ্ছে না।

Advertisement

জেলার একটি মিলের এক কর্তা বলেন, ‘‘খাদ্যসামগ্রী ভরার জন্য চটের বস্তার বড় বরাত জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে আসে। সেই বড় বরাতই আমরা পাচ্ছি না। ফলে, তৈরি সামগ্রী জমে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহে বড় বরাত আসবে। এলে ভাল। তবে যতক্ষণ না আসছে, বলা যাচ্ছে না।’’

অ্যাঙ্গাসের এক শ্রমিক জানান, গত ২১ জুলাই থেকে সপ্তাহে ছ’দিনের পরিবর্তে পাঁচ দিন কাজ দেওয়া হচ্ছিল তাঁদের। এ বার পনেরো দিন মিল পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় তাঁরা চিন্তিত। নোটিসে গ্যাঞ্জেসের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২৪ তারিখ থেকে মিল স্বাভাবিক অবস্থায় খুলবে। শ্রমিকেরা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ পাবেন।

গত কয়েক বছরে হুগলির বিভিন্ন মিল নানা সময়ে বন্ধ থেকেছে। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘অবস্থা দ্রুত শুধরে যাক, এটাই চাই। মিল বন্ধ থাকলে আমাদের সংসারের কী পরিস্থিতি হয়, আমরাই জানি।’’

শ্রমিকদের সমস্যার কথা মানছেন শ্রম আধিকারিকেরা। জেলার এক শ্রমকর্তা জানান, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। রাজ্যে জুটমিলগুলির সঙ্গে শ্রমিকদের দাবিসনদ নিয়ে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে শ্রম দফতরের বৈঠক হয় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে। সূত্রের খবর, সেখানেও বরাতের প্রসঙ্গ উঠলেও আলোচনা বিশেষ হয়নি।

এআইটিইউসি নেতা প্রাণেশ বিশ্বাসের দাবি, জুটমিল মালিকেরা বরাত নিয়ে যা বলছেন, পরিস্থিতি মোটেই তত খারাপ নয়। ইচ্ছাকৃত ভাবেই শ্রমিকের কাজ কমানো হচ্ছে। আইএনটিটিইউসি নেতা মনোজ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘চটের বস্তার বরাত মূলত কেন্দ্রীয় সরকারই দেয়। তাঁরা পর্যাপ্ত বরাত না দেওয়াতেই জুট মিলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। সিন্থেটিক লবির পৃষ্ঠপোষকতা করতেই ইচ্ছাকৃত ভাবে চটের বস্তার বরাত কমানো হয়েছে। এটা কেন্দ্রের দ্বিচারিতা।’’

শ্রমিকদের নানা সমস্যা উল্লেখ করে তা সমাধানের দাবিতে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে রবিবার ই-মেল করেছেন এআইটিইউসি অনুমোদিত ফেডেরাল চটকল মজদুর ইউনিয়নের নেতা দেবাশিস দত্ত। তাঁর অভিযোগ, জুট মিল ঘন ঘন বন্ধের কারণে শ্রমিক কর্মহীন হচ্ছেন। মিল চললেও শিফ্‌ট বা সপ্তাহের কাজের দিন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই শ্রমিক অন্য মিলে কাজে গেলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অর্থাৎ, সামগ্রিক পরিস্থিতি শ্রমিকের সংসারে আঘাত হানছে। শ্রমিকের দূরবস্থা মোচনে এবং চটশিল্পকে বাঁচাতে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন