বন্যার পরেই পুজো শুরু বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে

বন্যার ফলাফল মাঝে মধ্যে ভালও হয়। অন্তত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের শিবানীপুর গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা তাই মনে করেন। কারণ বন্যার জলে দামোদর উপচে না গেলে যে তাদের বাড়িতে পুজোর সম্ভাবনাই ছিল না।

Advertisement

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৫
Share:

ঠাকুর দালানে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।

বন্যার ফলাফল মাঝে মধ্যে ভালও হয়। অন্তত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের শিবানীপুর গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা তাই মনে করেন। কারণ বন্যার জলে দামোদর উপচে না গেলে যে তাদের বাড়িতে পুজোর সম্ভাবনাই ছিল না।

Advertisement

প্রতি বছর দামোদর পেরিয়ে পাশের গ্রামে দুর্গাপুজো দেখতে যেতেন শিবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু এক বছর বন্যায় ভেসে গেল গ্রাম। দামোদর পেরিয়ে পুজো দেখতে যাওয়া হল না।

সময়টা ১২৪৬ বঙ্গাব্দ। সেই বছরেই শিবানীপুর গ্রামের কর্তারা ঠিক করেন পরের বছর থেকে গ্রামেই পুজো হবে। পুজোর সব দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন গ্রামের বর্ধিষ্ণু বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। ঠিক হয়, বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুরদালানেই পুজো হবে। সেই শুরু। তার পর ১৭৭ বছর ধরে চলে আসছে সেই দুর্গাপুজো। এলাকায় বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো বলে পরিচিত হলেও আসলে সেটি গোটা গ্রামের পুজো। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে পঙক্তিভোজ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

Advertisement

বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির কর্তা শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অনেক বছর আগে পাশের গ্রাম শিবপুরের একটি বাড়িতে ঘটা করে দুর্গাপুজো হতো। গ্রামের মহিলাদের নিয়ে বাড়ির কর্তারা সেখানেই যেতেন। বন্যার পর থেকে গ্রামের মহিলারাই পুজোর উদ্যোগ নেন। প্রথমে অবশ্য পুরুষেরা নিমরাজি ছিলেন। কিন্তু পরে সবার সম্মতি নিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে পুজো শুরু হয়।

এ ভাবেই পুজোর নৈবেদ্য দেওয়া হয় । — নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সদস্য সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পরিবারের অনেকেই এখন কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর চার দিন তাঁদের প্রায় সবাই গ্রামে ফিরে আসেন। জন্মাষ্টমীর দিন থেকে ঠাকুরদালানে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। ষষ্ঠীতে বোধন। নবমীতে ছাগবলি দেওয়া হয়। পারিবারিক রীতি মেনে নবমীতেই হয় কুমারী পুজো। পুজোর চার দিন হয় পঙক্তি ভোজ। সপ্তমীর ভোজে পাতে পড়ে ভাত, ডাল, দু’রকম সব্জি, চাটনি, পায়েস। অষ্টমীর মেনু নিরামিষ। সে দিন থাকে লুচি, ছোলার ডাল, পনির, চাটনি, পায়েস, নবমীতে থাকে ভাত, ডাল, সব্জি, বলির মাংস, চাটনি, পায়েস, মিষ্টি। পুজোর প্রতিদিন তিন-চারশো গ্রামবাসী পাত পেড়ে খান। সন্ধ্যায় মঞ্চ বেঁধে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ বার নবমীর সন্ধ্যায় হবে যাত্রা। সব ক’টি অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীরাও যোগ দেন। এখন যাত্রার শেষ পর্যায়ের মহলা চলছে।

এই বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য কলেজ পড়ুয়া অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা এখন কলকাতার গড়িয়াহাটে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের পরিবারের মূল শিকড় হল দুর্গাপুজো। তাই যে যেখানেই থাকি না কেন পুজোর আগে উদয়নারায়ণপুরের বাড়িতে চলে যাই। চার দিন যে কোথা দিয়ে চলে যায় বুঝতে পারি না।’’

শিকড়ের টানই যে এই পুজোর মূল বৈশিষ্ট্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন