Coronavirus

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পথে দুই করোনা-জয়ী

সোমবার দুপুরে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালের সামনের দৃশ্য: প্রচারপত্র হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারবালা এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ মীরা চক্রবর্তী ও তাঁরই এলাকার বছর ছাব্বিশের এক তরুণ।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০৬:১০
Share:

সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছেন করোনা-জয়ী। চুঁচুড়ায়। —নিজস্ব িচত্র

‘বয়কট’ ও ‘হামলা’র শিকার হয়েছিলেন দুই করোনা-আক্রান্ত। এক জন ষাট পেরিয়েছেন। অন্য জন পাঁচিশের গণ্ডি। করোনা-জয়ী চুঁচুড়ার ওই দুই বাসিন্দা পথে নেমেছেন সচেতনতার বার্তা দিতে। পথচলতি মানুষের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিয়ে বলছেন, ‘‘রোগীর সঙ্গে নয়, লড়াই করুন রোগের সঙ্গে।’’

Advertisement

সোমবার দুপুরে চুঁচুড়ার ইমামবাড়া হাসপাতালের সামনের দৃশ্য: প্রচারপত্র হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারবালা এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ মীরা চক্রবর্তী ও তাঁরই এলাকার বছর ছাব্বিশের এক তরুণ। দু’জনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মাথায় গনগনে রোগ। অঝোরে ঘাম ঝরছে দু’জনের শরীরে। পথচলতি লোকজনের হাতে প্রচারপত্র তুলে দিচ্ছেন তাঁরা। কেউ জানতে চাইলে ভাগ করে নিচ্ছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে প্রচারে নেমেছেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘সামাজিক বয়কট কাকে বলে জানতাম না। জানলাম, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা যেন কারও সঙ্গে না-হয়। সেই আর্জি জানাতেই পথে নেমেছি।’’

গত জুনে মাথায় যন্ত্রণা নিয়ে চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মীরাদেবী। হাসপাতালে থাকাকালীন লালারস পরীক্ষা হয়েছিল। বাড়ি ফেরার পরে হাসপাতাল থেকে মীরাদেবীকে জানানো হয়েছিল, তিনি করোনা-আক্রান্ত। এর পরেই বদলে যেতে থাকে আশপাশের মানুষগুলো। মীরাদেবীর বাড়িতে থাকেন তাঁর মেয়ে ও জামাই। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে কেউ যাতে না-আসেন, তার জন্য সর্বদা নজরদারি চালাতেন কয়েকজন। কাউকে আসতে দেওয়া হত না। এমনকী, দোকান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে কাউকে আমাদের বাড়ি আসতে দিতেন না ওঁরা।’’ এখানেই শেষ নয়। মীরাদেবীর সংযোজন: ‘‘মাঝেমধ্যেই বাড়ির ছাদে ইট পড়ত।’’ করোনা-আক্রান্ত ওই প্রৌঢ়ার চিকিৎসা হয় পান্ডুয়ার কাছে একটি ‘সেফ হাউসে’। তাঁর অভিযোগ: ‘‘আমার মেয়ে-জামাইকে বাডিতে বন্দি থাকতে হয়েছে। বাড়ির বাইরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ আসতে না-পারে।’’ জুলাইয়ের প্রথমদিকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন মীরাদেবী। বলেন, ‘‘তখনই ঠিক করি, করোনা নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য পথে নামব।’’

Advertisement

করোনা-জয়ী তরুণের অভিজ্ঞতাও সেই একই। তাঁর দাদু করোনা-আক্রান্ত। এখনও তাঁর চিকিৎসা চলছে কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। লালারস পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁদের পরিবারের ন’জন সদস্যই করোনা-আক্রান্ত। ‘‘সেই খবর জানাজানি হওয়ার পরেই শুরু হয় বয়কট,’’ বললেন ওই তরুণ। তারপর যোগ করলেন: ‘‘আমরা করোনা-আক্রান্ত, এই খবর জানাজানি হওয়ার পরেই এক দিন রাতে বাড়িতে ইট ছুড়ে হামলা চালানো হয়। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। সামাজিক বয়কটও চলে। কেউ মুদির দোকানের জিনিসও এনে দিত না। এই অবস্থার স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের পাশে দাঁড়ায়। তারাই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করত।’’ তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় ভেবেছিলাম সুস্থ হয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে পথে নেমে প্রচার করব।’’

সোমবার হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়, পিপুলপাতির মোড-সহ কিছু এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করেন দুই করোনা-জয়ী। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন, তার সদস্য ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘করোনা-সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য যখন গোটা বিশ্ব এক হয়েছে, তখন সচেতনতার অভাবে কিছু মানুষ করোনা-রোগীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন।’’ আর মীরাদেবী বলেন, ‘‘রোগীর বিরুদ্ধে নয়, রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে জয়ী হতে হবে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন