আরামবাগে দু’টি দুর্ঘটনায় মৃত তিন

সোমবার সকালে আরামবাগের জয়রামপুরে একটি বাস নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ায় এক শিশু-সহ দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হন ৫২ জন। এ ছাড়া, গোঘাটে অন্য একটি দুর্ঘটনায় এক প্রৌঢ়া মারা যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০১:৫০
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত: নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ে রয়েছে বাসটি। জয়রামপুরে। ছবি: মোহন দাস

রাস্তায় একের পর এক ‘স্পিড-ব্রেকার’ হয়েছে সদ্য। গতি নিয়ন্ত্রণের বোর্ডও টাঙানো হয়েছে। প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ার। কিন্তু আরামবাগ-তারকেশ্বর রোডে লাগাতার দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনের কোনও দাওয়াই-ই কাজ দিচ্ছে না। সোমবার সকালে আরামবাগের জয়রামপুরে একটি বাস নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ায় এক শিশু-সহ দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হন ৫২ জন। এ ছাড়া, গোঘাটে অন্য একটি দুর্ঘটনায় এক প্রৌঢ়া মারা যান।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন তারকেশ্বর থেকে খানাকুলের বন্দরগামী বাসটি তীব্র গতিতে আরামবাগের দিকে আসছিল। সকাল ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ জয়রামপুরে একটি গাড়িকে ‘ওভারটেক’ করার সময় আচমকা রাস্তায় গরু এসে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি বাঁ দিকের নয়নজুলিতে গিয়ে পড়ে। মৃত শিশুটির নাম রাকেশ পরামানিক (৫)। বাড়ি পুরশুড়ার কুলবাতপুরে। রাত পর্যন্ত অন্য মৃত মহিলা যাত্রীর পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ৩৫ জনের চিকিৎসা চলছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার জেরে সকালে ঘণ্টাদুয়েক ওই রাস্তা স্তব্ধ
হয়ে যায়।

আহতদের দাবি, বাসটি মালিক নিজেই চালাচ্ছিলেন। কত যাত্রী হয়েছে, পিছন ফিরে তা দেখতে গিয়েই ওই দুর্ঘটনা। স্থানীয়েরাই প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও দমকল যায়। পুলিশ ও ক্রেন আসতে দেরি হওয়ায় উদ্ধারকারীরা বিক্ষোভ দেখান। এক পুলিশ অফিসারকে কয়েকজন মহিলা হেনস্থাও করেন বলে অভিযোগ। উদ্ধারকারীদের অভিযোগ, ঘটনার প্রায় ৪০ মিনিট পর পুলিশ এবং ক্রেন আসে। ওই দেরি না-হলে শিশু এবং মহিলা হয়তো বেঁচে যেতেন। দেরির কথা অস্বীকার করে পুলিশের পাল্টা দাবি, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছনো হয়েছে। পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। বাসটি ক্রেনে করে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, বিকেল পর্যন্ত চালক বা বাসকর্মীদের পুলিশ ধরতে পারেনি।

Advertisement

গত কয়েক মাসে ওই রাস্তায় বেশ কিছু দুর্ঘটনা হয়েছে। এড়ানো যায়নি প্রাণহানি। সম্প্রতি পুরশুড়া পর্যন্ত আরামবাগ-তারকেশ্বর রোডের বিপজ্জনক সাতটি জায়গায় ‘স্পিড-ব্রেকার’ করা হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার অন্তর গতি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বোর্ড বা ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। প্রতি মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ার পালা করে ‘ডিউটি’ করছেন। তার পরেও দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকায় পথ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। আরও কিছু ব্যবস্থার কথা শুনিয়েছে তারা।

আরামবাগের এসডিপিও কৃশানু রায় বলেন, “আমরা আরও কিছু পরিকল্পনা করছি। তার মধ্যে অন্যতম ট্রাফিক আইন ভাঙলে জরিমানা আদায়-সহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রয়োজনে রাস্তায় আরও কিছু স্পিড-ব্রেকারও করা হবে।” তবে, সংশ্লিষ্ট রাস্তাটির দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের আরামবাগ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় মনে করেন, যে হারে যানবাহন বাড়ছে, তাতে রাস্তাটি চার লেনের না-হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনা রোধ করতে সমস্যা হবে। একই সঙ্গে অবশ্য শীঘ্রই ওই কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

এই মহকুমারই গোঘাটের কোটা এলাকায় রাস্তা পেরোতে গিয়ে রবিবার বিকেলে মোটরবাইকের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন প্রতিমা দাস (৫০) নামে এক প্রৌঢ়া। তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা। তাঁকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সোমবার সকালে প্রতিমাদেবী মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে। বাইক আরোহীকে পুলিশ ধরতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন