পরিচারিকাকে নিগ্রহ, হাওড়ায় ধৃত ৩

কিশোরী পরিচারিকার উপরে টানা দু’দিন ধরে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভিন্ রাজ্য থেকে নিয়ে আসা ওই কিশোরীর উপরে অত্যাচারের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ঘটনার পরে সে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে সে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। ওই কিশোরীর অভিযোগ পেয়ে খুনের চেষ্টা ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মঙ্গলবার ওই পরিবারের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

পরিচারিকা নিগ্রহে ধৃতদের দু’জন। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

কিশোরী পরিচারিকার উপরে টানা দু’দিন ধরে শারীরিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভিন্ রাজ্য থেকে নিয়ে আসা ওই কিশোরীর উপরে অত্যাচারের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, ঘটনার পরে সে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে সে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

ওই কিশোরীর অভিযোগ পেয়ে খুনের চেষ্টা ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মঙ্গলবার ওই পরিবারের তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের অবিনাশ ব্যানার্জি লেনে। পুলিশ জানিয়েছে, অসমে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় গোলমাল চলায় ছ’মাস আগে সেখান থেকে অবিনাশ ব্যানার্জি লেনে বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন তনুশ্রী দাস নামে এক মহিলা। তনুশ্রীর স্বামীর নাম অশোক দাস। পেশায় চিকিৎসক অশোকবাবুর অসমের মীরাজুলি গ্রামে একটি নার্সিংহোম রয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই থাকেন। পুলিশ জানায়, হাওড়ায় বাপের বাড়ি ফিরে আসার সময়ে তনুশ্রী ওই গ্রাম থেকে বছর ষোলোর এক কিশোরীকে বাড়ির কাজের জন্য হাওড়ায় নিয়ে আসেন।

Advertisement

ওই কিশোরী ছ’মাস হাওড়ায় থাকার পরে গত শনিবার হঠাৎ তনুশ্রী এবং তাঁর বোন জয়শ্রী ঘোষ অভিযোগ করেন, তাঁদের বাড়ি থেকে অনেক টাকা ও ঘড়ি চুরি হয়ে গিয়েছে। তাঁদের সন্দেহ, ওই পরিচারিকাই এ কাজ করেছে। এর পরেই তাঁরা ওই কিশোরীকে মারধর ও অকথ্য অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ।

এ দিন নার্সিেংহামের আইসিইউ-এ শুয়ে ওই কিশোরী জানায়, সে বারবার তনুশ্রী ও জয়শ্রীকে বলেছিল যে, সে চুরি করেনি। প্রয়োজনে তার জামাকাপড় ও ব্যাগও খুঁজে দেখতে বলে সে। তার অভিযোগ, এতে কান না দিয়ে দুই বোন মিলে প্রথমে কিল-চড়-ঘুষি মারা শুরু করে। এর পরে এক বাটি গরম তেল তার দিকে ছুড়ে দেয়। কোনও রকমে সরে গেলেও শরীরের অনেকটা পুড়ে যায় ওই কিশোরীর। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ওই দু’জন মিলে আগুনে খুন্তি গরম করে তার দু’হাতে চেপে ধরে বলে অভিযোগ।

ওই কিশোরী বলে, “যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করে উঠলে ওরা কাপড় দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরেছিল। তাই আশপাশের কেউ কিছু শুনতে পায়নি। যতটা গরম তেল আমার দিকে ছুড়েছিল, তার পুরোটা গায়ে পড়লে আমি মরে যেতাম।”

মেয়েটির অভিযোগ, শনিবার সারা দিন তাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। পরদিন, রবিবার সকালে তনুশ্রী ও জয়শ্রীর কাকা দীপক ঘোষ তাকে একটি ঘরে বন্ধ করে যৌন নির্যাতন চালান। ওই কিশোরীর দাবি, সে বাড়ির সকলের কাছে হাতেপায়ে ধরে অনুনয় করে, যে সে চুরি করেনি, তাকে আর যেন অত্যাচার না করা হয়। কিন্তু কেউ শোনেননি। মানসিক ভাবে বির্পযস্ত হয়ে এর পরেই আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে ওই কিশোরী জানিয়েছে। তাই ছাদের ফুলগাছের পরিচর্যার জন্য মালিদের রাখা কীটনাশক খেয়ে ফেলে সে।

পুলিশ জানায়, অসুস্থ ওই কিশোরীকে ওই পরিবারের লোকেরাই স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি ওই মেয়েটির বয়ান পাওয়ার পরে মঙ্গলবার সকালে দুই বোন তনুশ্রী, জয়শ্রী ও তাঁদের দীপকবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের এ দিনই হাওড়া আদালতে তোলা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন