চব্বিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চুঁচুড়ায় চার যুবক খুনের ঘটনায় ৬ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শুক্রবার থানায় বিক্ষোভের পাশাপাশি চার যুবকের দেহ রাস্তায় রেখে অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষ। একঘণ্টা পরে অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
বৃহস্পতিবার ভোরে চুঁচড়ার কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সিমলার সরস্বতী নদীর পাড় ঘেঁষা ধানখেত থেকে পুলিশ চার যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাপস দাস (৩০), সুকুমার মণ্ডল (৩৪), জয় মণ্ডল (১৮) এবং বরুণ মণ্ডল (২১) বুধবার রাতে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখবেন বলে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেও বাড়ি না ফেরায় তাঁরা খোঁজ শুরু করেন। থানায় খবর দেন। তখনই থানা থেকে তাঁদের চার যুবকের দেহ উদ্ধারের কথা জানানো হয়। পরে তাঁরা দেহগুলি শনাক্ত করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ রাতেই ওই এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কালু বাগ এবং আকাশ মোহালি নামে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে। জেরায় তারা খুনের কথা স্বীকারও করে বলে পুলিশের দাবি। তাদের জেরা করে পুলিশ আরও চারজনের কথা জানতে পারে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই মহম্মদ নজরুলউদ্দিন, সেখ হাসিবুল ওরফে গুগল, অসীম সরকার এবং ধনিয়া মোহান্তি নামে আরও চারজনকে গ্রেফতার করে।
এদিন সকালে ধৃতদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় জনতা থানায় বিক্ষোভ দেখায়। ময়নাতদন্তের পর ওই চার যুবকের দেহ নিয়ে বাসিন্দারা চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ শুরু করে। বিকেল পাঁচটা নাগাদ অবরোধ শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক। পুলিশ বাহিনী নিয়ে পৌঁছে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও। পরে তাঁদের হস্তক্ষেপে ঘণ্টাখানেক পরে অবরোধ ওঠে। যদিও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তাপস দাস কলমিস্ত্রি ছিলেন। তিনি চুঁচুড়ার কনকশালি এলাকার শোলার ঘাটের বাসিন্দা। জয় মণ্ডল থাকতেন খুশিগলির বুড়োশিবতলায়। একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাকিরা। পুলিশের অনুমান, বুধবার রাতে ওই চার যুবককে চুঁচুড়া স্টেশন চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে ধৃতরা ভেবেছিল তাদের উপর হামলা চালাতে এসেছে। সেই আশঙ্কাতেই তারা চারজনকে ডেকে মদ খাইয়ে বেঁহুশ করে ফেলে। তারপর ছেঁড়া কাপড়ের ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাদের খুন করে। এরপর মৃতদেহগুলি একটি ছোট লরিতে তুলে লেপ চাপা দিয়ে দক্ষিণ সিমলার নির্জন এলাকায় ফেলে যায়। সম্ভবত, এলাকা দখল নিয়ে দুষ্কৃতীদের নিজেদের গোলমালেই এই খুন। যদিও নিহতদের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, কোনওরকম অসামাজিক কাজে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পরিবারের লোককে খুন করা হয়েছে।
এদিন ধৃতদের চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হলে ধনিয়া মোহান্তি এবং শেখ হাসিবুলের ১৪ দিনের জেল হাজত এবং বাকি চার জনকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।