বারাণসী থেকে গ্রেফতার সাত

পুলিশ যাতে গতিবিধি আঁচ করতে না পারে তাই খুনের পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছিল ফোন। তাই ‘প্ল্যান-বি’ হিসেবে দুষ্কৃতীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের ফোনের উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। তাতেই মিলল সাফল্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪১
Share:

পুলিশ যাতে গতিবিধি আঁচ করতে না পারে তাই খুনের পর থেকেই বন্ধ রাখা হয়েছিল ফোন। তাই ‘প্ল্যান-বি’ হিসেবে দুষ্কৃতীদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের ফোনের উপর নজর রাখতে শুরু করে পুলিশ। তাতেই মিলল সাফল্য।

Advertisement

গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ির কাছে রাস্তায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান, মনোজ উপাধ্যায়। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুষ্কৃতীরা মনোজকে পরপর পাঁচটি গুলি করেছিল। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে ঘরে-বাইরে চাপ তৈরি হয়েছিল পুলিশের উপর। শুক্রবার সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে এবং তেলেনিপাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর প্রদীপ দাসকে। চন্দনগরের নতুন কমিশনারের দায়িত্ব নেন অজয় কুমার।

তদন্তকারীরা জেনেছিলেন, পুরপ্রধান খুনে স্থানীয়দের সঙ্গে দুষ্কৃতীদেরও ভাড়া করে আনা হয়েছিল। দুষ্কৃতীরা খোঁজে কমিশনারেটের একাধিক দল বিহার ও ঝাড়খণ্ডে চলে যায়। মঙ্গলবার রাত থেকেই পুলিশ দুষ্কৃতীদের সম্ভাব্য ডেরায় হানা দিলেও কাউকে ধরা যাচ্ছিল না। সোমবার রাতে অবশেষে মিলল সাফল্য। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে রাজু ও রতন চৌধুরী দুই ভাই। এছাড়াও ধরা হয়েছে আকাশ চৌধুরী, রাজেশ চৌধুরী, কৃষ্ণা চৌধুরী, দেবু পাকড়ে ও সন্তোষ চৌধুরী নামে পাঁচ জনকে। তবে অভিযুক্ত নির্দল কাউন্সিলর রাজু সাউ-সহ মোট তিন জন এখনও পলাতক।

Advertisement

চন্দননগর কমিশনারেটের কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘আমাদের অফিসারদের দু’টি টিম বাইরে ছিল। আমাদের গোয়েন্দা প্রধান সুমিত কুমারের নেতৃত্বে একটি দল দুষ্কৃতীদের গতিবিধি নজর রাখছিল। রেল সুরক্ষা বাহিনী এবং উত্তরপ্রদেশের এটিএসের একটি দল সাহায্য করেছে।’’ মঙ্গলবার ধৃতদের বেনারসে ট্রানজিট রিমান্ডের জন্য আদালতে তোলা হয়। আজ বুধবার তাদের হুগলিতে নিয়ে আসার কথা।

পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা বুঝতে পেরেছিল যে পুলিশ তাদের পিছু নিয়েছে। তাই তারা মোবাইল ব্যবহার করছিল না। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বার বার ঠিকানাও বদল করছিল তারা। তবে তদন্তকারীরা ধৈর্য্য হারাননি। এর মধ্যে চন্দননগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অতুল ভি-র নেতৃত্বে একটি আরও একটি দল ভিন রাজ্যে যায়। দুষ্কৃতীরা কখনও পাটনা আবার কখনও মোগলসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় ঠিকানা বদল করে থাকতে শুরু করে।

সোমবার তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দুষ্কৃতীরা পটনায় একটি গোপন ডেরায় রয়েছে। কিন্তু পুলিশ যখন সেখানে পৌঁছয় ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। সোমবার রাতেই পুলিশের কাছে ফের খবর আসে, সাত জন দুষ্কৃতী উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর একটি হোটেলে রয়েছে। এবার আর ভুল হয়নি। ওই হোটেলের ঠিকানা জেনে সোমবার রাতেই সেখানে পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এটিএসের একটি বাহিনী। সেখানেই হাতেনাতে ধরা পড়ে সাত জন।

দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারির খবর জেনে মনোজের দাদা সুনীল উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি দোষীদের এমন শাস্তি চাই যাতে ভবিষ্যতে কাউকে নিজের ভাইকে হারাতে না হয়।’’ তবে এখনও অভিযুক্তদের দু’জনকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। তাদের ধরা গেলে মনোজ হত্যা-রহস্যের পর্দা উঠবে বলে আশা করছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন