পরিত্যক্ত ক্লাবে দুষ্কৃতীদের আড্ডা, আতঙ্কে বাসিন্দারা

সব মিলিয়ে দমবন্ধ করা এমনই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড ময়দানের উল্টোদিকে পুরাতন সায়ার লেনে। বছর পনেরো আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত ক্লাব ঘরকে ঘিরে এই আতঙ্ক।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:১১
Share:

পাঁচিলের কাঁটাতার টপকে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা। যা ধরা পড়েছে সিসিটিভি ফুটেজে।

মাঝরাতে আচমকা ঢিল পড়ে জানলার কাচ ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছে। সকাল হলেই দেখা যাচ্ছে, বন্ধ বাড়ির জানলা ভেঙে কেউ যেন ঢোকার চেষ্টা করেছে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, কারা যেন পাঁচিলের কাঁটাতার টপকে বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছে।

Advertisement

সব মিলিয়ে দমবন্ধ করা এমনই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড ময়দানের উল্টোদিকে পুরাতন সায়ার লেনে। বছর পনেরো আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত ক্লাব ঘরকে ঘিরে এই আতঙ্ক। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগাছা জঙ্গলে ঢাকা ওই ক্লাব ঘরে রাত বাড়লেই দুষ্কৃতীদের আনাগোনা শুরু হয়। বাসিন্দাদের নানা ভাবে ভয় দেখানোর পাশাপাশি শুরু হয়েছে দুষ্কৃতীমূলক কাজ।

আতঙ্কিত বাসিন্দারা প্রতি বাড়িতেই সিসি ক্যামেরা লাগাতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ আবার নিজেদের পাঁচিলের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছেন। শান্তি নেই তাতেও। অভিযোগ, গভীর রাতে ওই কাঁটাতার টপকে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে দুষ্কৃতীরা। প্রশ্ন উঠেছে, ডুমুরজলা ময়দান ঘিরে যখন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে, যে হেলিপ্যাড থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই আকাশে ওড়েন, সেখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে একটা গোটা পাড়া আতঙ্কে থাকে

Advertisement

কী করে?

ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের দক্ষিণে সুনীলদার মাঠের পাশের রাস্তা থেকেই দেখা যায় ভাঙাচোরা ক্লাব ঘরটি। কাঠা খানেক জায়গার উপরে টালির চাল অর্ধেক ভেঙে পড়েছে। পিছনের জমি ভরে গিয়েছে জঙ্গলে। প্রবেশ পথের টিনের দরজায় তালা থাকলেও পিছনের চার ফুটের পাঁচিল টপকালেই চৌহদ্দিতে ঢোকা যায় অনায়াসে।

পরিত্যক্ত ক্লাবের প্রতিবেশী রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের প্রাক্তন কর্মী তাপস দে। তাপসবাবুর অভিযোগ, দু’বছর আগে তাঁর পাশের বাড়ির জানলা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করেছিল দুষ্কৃতীরা। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাপসবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে টিকতে পারছি না। গোটা পাড়া আতঙ্কিত। পাঁচিলে কাঁটাতার, সিসি ক্যামেরা লাগিয়েও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছি না।’’ অন্য বাসিন্দা শ্যামল দে বলেন, ‘‘রাতে আশপাশের জানলার কাচ ঢিল মেরে ভেঙে দিচ্ছে। পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। ক্লাব ঘরটি দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে গিয়েছে।’’

প্রশ্ন, পরিত্যক্ত এই ক্লাবটিকে এত দিন ভেঙে ফেলা হয়নি কেন? স্টুডেন্ট অ্যাথলেটিক ক্লাব নামে ওই বন্ধ হওয়া ক্লাবের প্রাক্তন কর্মকর্তা কালীপদ ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের বয়স হয়েছে। ক্লাবটা কে ভাঙবে বলুন? তবে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা অবশ্যই বন্ধ হওয়া দরকার।’’

দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কোনও ভাবেই চলতে দেওয়া যাবে না, মানছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল রায়। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে। দলের পক্ষ থেকেও ক্লাবটির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের এককাট্টা হতে হবে।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। শীঘ্রই ধরা পড়বে। তবে ক্লাবটি ভাঙতে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন