মেয়েদের নিয়ে কর্মশালা চাঁপসড়ায়। নিজস্ব চিত্র
বছর দু’য়েক ধরে বেহাল পড়ে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে যেতে হয় শ্রীরামপুর হাসপাতালে। তাই শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের চাঁপসড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরাতে এ বার কোমর বাঁধছেন গ্রামের মেয়েরাই।
শুক্রবার, প্রজাতন্ত্র দিবসে চাঁপসড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাঁচাও উদ্যোগের (প্রস্তুতি কমিটি) তরফে স্থানীয় সতীশচন্দ্র বিদ্যানিকেতনে ‘মা-শিশু এবং নারীর স্বাস্থ্য’ নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন গ্রামের শতাধিক মহিলা। পাশের বৈদ্যবাটি পুর-এলাকার শাসমলপাড়া এবং পদ্মাবতী কলোনির মহিলারাও এসেছিলেন। মহিলাদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁপসড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালুর কথা ছিল। সেই মতো ভবন, চিকিৎসক-নার্সদের আবাসন তৈরি করা হয়। কিন্তু সেই অন্তর্বিভাগ তো চালু হয়ইনি, উল্টে বছর দু’য়েক ধরে বহির্বিভাগেও চিকিৎসক আসছেন না বলে অভিযোগ। এরপর চিকিৎসকের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন গ্রামবাসী। চাপে প়ড়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সপ্তাহে দু’দিন এক চিকিৎসককে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাতেও সমস্যা মিটছে না।
কাঞ্চন চৌবে নামে বছর পঞ্চাশের এক গৃহবধূর কথায়, ‘‘রাতবিরেতে শরীর খারাপ হলে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ছুটতে হয়। গরিব মানুষ গাড়িভাড়া জোগাড় করতে পারেন না।’’ সতীশচন্দ্র বিদ্যানিকেতনের ইংরেজি শিক্ষক শুভ্রবরণ মান্না বলেন, ‘‘অনেক সময় স্কুলে ছেলেমেয়েরা খেলতে গিয়ে চোট পায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু মেলে না।’’
আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনসা রায় এবং সম্পাদক সামন্ত দাস জানান, আন্দোলনের শুরু থেকেই মহিলারা এগিয়ে আসছেন। তাই মহিলাদের দল তৈরির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতি দলে ১২-১৪ জন মহিলা থাকবেন। তাঁদের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সাহায্যের জন্য হাওড়ার চেঙ্গাইলের শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর রাজ্যধরপুরে একটি এবং ছিনামোড়ে দু’টি মহিলা দল তৈরি হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির করা হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই বিকল্প চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার সাফ কথা, ‘‘চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তার মধ্যেই একজন চিকিৎসক নিয়মিত বসছেন। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হলে সমস্যা মিটবে।’’