অর্পণ সামন্ত।
যৎসামান্য জমি রয়েছে তাদের। জমির অবস্থা অনুযায়ী আমন ধান ছাড়া আর কোনও চাষ হয় না। তাই বছরের বাকি সময় তার বাবাকে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। অবসর সময়ে দু’চার জন শিশুশ্রেণির ছেলেমেয়েকে পড়িয়ে কিঞ্চিৎ রোজগাগর একমাত্র ছেলে অর্পণকে পড়িয়েছেন হাওড়া শ্যামপুরের চাউলখোলা গ্রামের বাসিন্দা অশোক সামন্ত। তাঁর ছেলে এ বার ৫৯২ পেয়ে পেয়েছে মাধ্যমিকে। ছোট থেকেই তার পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোঁক। বিশেষ করে অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়। কিন্তু আর্থিক অনটনে তার মাঝপথে পড়াশোনা থেমে যাওয়ায় উপক্রম হয়েছিল। তার পরেও আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে অর্পণ এ বার অঙ্কে পেয়েছে ৯২, ভৌতবিজ্ঞানে পেয়েছে ৯০, জীববিজ্ঞানে পেয়েছে ৯৭, ইতিহাসে ৮৬, ভূগোলে ৮৫, ইংরেজিতে ৬০ এবং বাংলায় ৮২। প্রাইভেট টিউটর নেওয়ার মতো তার ক্ষমতা ছিল না। তবে স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে পাশে পেয়েছে সে। অর্পণ শ্যামপুর গুজারপুর সুরেন্দ্রনাথ হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল।
বাবা অশোক সামন্ত বলেন, ‘‘এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। এখন পড়াশোনার জন্য বই, খাতা ও অন্যান্য খরচ চালাতে পারব কি না জানি না। দেখি ছেলের জন্য কতটা কী করতে পারি।’’ বাপ-ঠাকুরদার আমলের মাটির দেওয়াল টালির চালের জীর্ণ দু’কামরার ঘর তাঁদের। বর্ষায় জল পড়ে। অর্থাভাবে মেরামত করাও হয় না। কোনও রকমে মাথা গুঁজে দিন কাটানো ছাড়া উপায় নেই। প্রধান শিক্ষক সুমন কল্যাণ মাইতি বলেন, ‘‘অর্পণ ভাল ছাত্র। ক্লাসে রেজাল্টও ভাল করত। তবে খুবই দুঃস্থ। আমাদের স্কুলে ওকে ভর্তি করে দিয়েছি। পড়াশোনার ব্যাপারে তাকে যতটা সম্ভব সাহায্য করব।’’ অর্পণের কথায়, ‘‘অঙ্কের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। বাবার তো কোনও স্থায়ী রোজগার নেই। জানি না স্বপ্ন পূরণ হবে কি না!’’