হুগলির সিঙ্গুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ঘটনায় জখম থেকে গুড়াপে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যু। পাশের জেলা বর্ধমানে দুর্ঘটনার পাশাপাশি গরম পিচে একই পরিবারের ছয় জনের পথ-সমাধি। সবই ঘটেছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। যা কার্যত পথ নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে ভালরকম ঝাঁকুনি দিয়েছে।
মোটা টাকা টোল দিয়ে মানুষ গাড়ি নিয়ে ওই পথে যাতায়াত করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের প্রশ্ন, নিরাপদে যাতায়াতের জন্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? লোকশিল্পী কালিকাবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় সড়কগুলিতে পথ নিরাপত্তার বিষয়টি কড়া হাতে মোকাবিলা করতে বলেন। চলতি মাসে হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এ বিষয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে প্রীতম গঙ্গোপাধ্যায়-সহ অন্য কর্তারাও ছিলেন। সেখানেই অভিযোগ ওঠে, হুগলিতে ডানকুনি-সহ এক্সপ্রেসওয়ের যে সব ‘অ্যাপ্রোচ রোড’ রয়েছে সেখানে সার সার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। জাতীয় সড়ক চলাচলের জন্য। কারখানার গাড়ি রাখার জন্য নয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, ‘‘ এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি সরকারি সংস্থার ট্রেলার দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু সংস্থার ভিতরে এর জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। পুলিশ চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারে।’’
এক্লপ্রেসওয়েতে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয় বলে জেলা পুলিশ দাবি করলেও পর দুর্ঘটনায় তাদের দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের কাজের ইচ্ছে নিয়েও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি থানার একটা গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে থাকে। অভিযোগ, অনেক গাড়ি নিয়ম ভাঙলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। পাশাপাশি, জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনার নানা কর্মসূচী নেওয়া হলেও সেখানে পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগও উঠেছে। জাতীয় সড়কে পুলিশ পথ নিরাপত্তার কর্মসূচি নেয়। অথচ জাতীয় সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকেই সেই কর্মসূচিতে ডাকেন ডাকা হয় না।
প্রশাসনের এই সমন্বয়ের অভাবেই জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে নেওয়া নানা ব্যবস্থায় ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। হুগলি জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘আমি এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরি। তবে কোনও গাড়িকে লেন ভাঙতে দেখিনি।’’ তিনি জানান, জেলা পুলিশ নিয়মভাঙা গাড়ির ক্ষেত্রে ৭১টি ক্ষেত্রে মামলা করেছে। যদিও জেলা পুলিশের এমন যুক্তি শুনে জাতীয় সড়ক পরিবহণের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলার পুলিশ কর্তারা পথে বের হলে নিয়মভাঙা গাড়ি দেখতে পান না। তা হলে মামলা হল কাদের বিরুদ্ধে।’’
প্রশাসনের এমন তর্জায় অবশ্য কোনও আগ্রহ নেই মুম্বই রোড বা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নিত্য যাতায়াতকারীদের। তাঁরা চান জাতীয় সড়কে নিরাপদ সফর। এখন দেখার তর্জা দূরে রেখে প্রশাসন তাতে কতটা সক্রিয় হয়।