কিশোরীর ফোন, বিয়ে রুখল প্রশাসন

ওই কিশোরী জানায়, এই বয়সেই সে বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু তার আপত্তি ধোপে টেকেনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মেয়েটি চাইল্ড লাইনে ফোন করে সব জানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোন্নগর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০১:০৩
Share:

সাহসিনী: রূপসী দাস।

দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু বিয়েতে নারাজ চোদ্দ বছরের কিশোরী মরিয়া হয়ে মাঝরাতে ফোন করল চাইল্ড লাইনে। প্রশাসনের তৎপরতায় বন্ধ হল অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ওই নাবালিকার বিয়ের তোড়জোড়। মঙ্গলবার হুগলির কোন্নগর শহরের ঘটনা। রূপসী দাস নামে ওই সাহসিনীর ঠাঁই হয়েছে হোমে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, রূপসী বাবা-মায়ের সঙ্গে কোন্নগর পুরসভার জোড়াপুকুর এলাকায় ভাড়া থাকে। বাবা ঢালাইয়ের কাজ করেন। সম্প্রতি অভিভাবকেরা মেয়েকে ‘পার’ করার সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার মুর্শিদাবাদের এক তরুণ তাকে দেখতে আসেন। তাঁর সঙ্গেই আজ, বুধবার মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়। ছেলেটিরও বিয়ের বয়স হয়নি। ওই কিশোরী জানায়, এই বয়সেই সে বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু তার আপত্তি ধোপে টেকেনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মেয়েটি চাইল্ড লাইনে ফোন করে সব জানায়।

চাইল্ড লাইনের তরফে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে জানানো হয়। মঙ্গলবার মহকুমাশাসক দফতর, চাইল্ড লাইন, উত্তরপাড়া থানার আধিকারিক এবং জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) প্যারালিগাল ভলান্টিয়ার মেয়েটির বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েটি জানায়, সে বাড়িতে ফিরতে চায় না। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির নির্দেশে তাকে হোমে পাঠানো হয়।

Advertisement

প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে ওই কিশোরী জানিয়েছে, তারা তিন বোন। সে ছোট। দুই দিদিরই কম বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আঠেরো বছরের নিচে মেয়েদের এবং একুশ বছরের নিচে ছেলেদের বিয়ে নিষিদ্ধ। অভিভাবকদের এটা মানতেই হবে। অন্যথায় প্রশাসনের তরফে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ফোন করে নিজের বিয়ে আটকানোর জন্য মেয়েটিকে বাহবা দিচ্ছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) তনয় দেব সরকার বলেন, ‘‘মেয়েটি খুব ভাল কাজ করেছে। সচেতনতা এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। প্রশাসন ওর পাশে আছে।’’ ডালসার সচিব অনির্বাণ রায়ের কথায়, ‘‘মেয়েটি দৃষ্টান্ত তৈরি করল। ওকে দেখে অন্য মেয়েরাও অনুপ্রাণিত হবে।’’ অনির্বাণবাবুর সংযোজন, ‘‘কম বয়সে বিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে ডালসা এবং চাইল্ড লাইনের তরফে বিভিন্ন স্কুলে শিবির করা হয়। তথ্যচিত্র দেখানো হয়। বলা বাহুল্য, এর ফলে ছোটদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। এই ঘটনা তারই ফলশ্রুতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন