প্যারীমোহন কলেজ থেকে ধৃত দুই ছাত্র
College admission

টাকা নিয়ে ভর্তির নালিশ এ বার উত্তরপাড়ায়

সেও প্যারীমোহন কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল। ফর্মও তুলেছিল। কিন্তু ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য সঞ্জু তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিল। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল আরও প্রার্থী ‘ধরে’ দিতে পারলে শুভ্রর টাকা কিছুটা কম করে দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০২:০২
Share:

অনৈতিক: প্যারীমোহন কলেজে ভর্তির জন্য অপেক্ষায় পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। অভিযুক্ত শুভ্র অধিকারী (ইনসেটে)। ছবি: দীপঙ্কর দে

টাকা নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে গ্রেফতার হল দু’জন। মঙ্গলবার সকালে উত্তরপাড়ার প্যারীমোহন কলেজের ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জু সিংহ ও শুভ্র অধিকারী নামে দু’জনকে। সঞ্জু ওই কলেজেরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং এবিভিপি সদস্য। শুভ্র এ বছরই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই চক্রে আরও কেউ জড়িত কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বেগমপুরের বাসিন্দা শুভ্র অধিকারী দাবি করেছে সেও প্যারীমোহন কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিল। ফর্মও তুলেছিল। কিন্তু ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য সঞ্জু তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিল। সেই সঙ্গে নাকি বলা হয়েছিল আরও প্রার্থী ‘ধরে’ দিতে পারলে শুভ্রর টাকা কিছুটা কম করে দেওয়া হবে। শুভ্র পুলিশকে জানিয়েছে, এই জন্যই সে আরও কয়েকজনের কাছে টাকা চায়।

ঠিক কী হয়েছিল?

Advertisement

তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, উত্তরপাড়া কলেজের ছাত্র সঞ্জু বেগমপুরের বাসিন্দা। বারুইপাড়ার বাসিন্দা সৌমেন বোদক এবং অনির্বাণ কোলে নামে দুই ছাত্রও প্যারীমোহন কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। তাঁদের একজনের সঙ্গে কোনও ভাবে সঞ্জুর পরিচয় ছিল আগেই। অভিযোগ, ওই তিনজনকেই কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সঞ্জু। সেই মতো এ দিন সকালে চারজনে বেগমপুর স্টেশনে দেখা করেন। সেখান থেকে সোজা কলেজে। সৌমেন, অনির্বাণের দাবি, প্রথমে টাকার কথা তাঁদের কিছুই বলা হয়নি। কলেজে আসার পরই সঞ্জু আর শুভ্র টাকার কথা তোলে। সৌমেনদের কথায়, ‘‘আমাদের থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু অত টাকা কোথায় পাব? তাই নিয়ে বচসা শুরু হয়। পরে আমরা ছাত্র সংসদের অফিসে গিয়ে অভিযোগ জানাই।’’

ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সন্দীপন নাথ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সৌমেন, অনির্বাণের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তারপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়। সঞ্জু বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সঙ্গে যুক্ত।’’ সঞ্জু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘‘আমাকে ওরা বলেছিল ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা। আমি বলেছিলাম চেষ্টা করব। কিন্তু টাকার কোনও কথা হয়নি।’’

তবে তার বিজেপি যোগ নিয়ে সংশয় নেই। সঞ্জুর ফেসবুক প্রোফাইলেও মিলেছে বিজেপির উত্তরীয় গায়ে, নেতাকর্মীদের সঙ্গে নানা ছবি। সে কথা স্বীকার করেছে বিজেপিও।

বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের দিকে। দলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুনেছি সঞ্জু এবিভিপি করেন। কিন্তু অভিযোগটি মিথ্যা। তৃণমূল সর্বত্র টাকা তুলছে, সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই আমাদের ছাত্র সংগঠনের এক সদস্যকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল।’’

গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্যারীমোহন কলেজের অধ্যক্ষ সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছাত্রদের জড়িত থাকার কথাই নয়। আমরা বারবার নিষেধ করেছি। দুই অধ্যাপককে নিয়ে বিশেষ কমিটি ভর্তি প্রক্রিয়া তদারক করে। এত ছাত্রের মধ্যে সবাইকে চিনে রাখা সম্ভব নয়। আমি সঞ্জুকে চিনি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন