পর্যাপ্ত কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নেই, অসহায় চাষি

কৃষির উন্নতিতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি চাষিদের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নিয়োগ করেছিল কৃষি দফতর। পরিকল্পনা ছিল ৬-৭টি গ্রাম নিয়ে তৈরি করা হবে একটি সার্কেল। সার্কেল পিছু থাকবে একজন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক। যদিও পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রতি পঞ্চায়েত পিছু একজন করে কৃষি প্রযুক্ত সহায়ক থাকবে।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০২:১২
Share:

কৃষির উন্নতিতে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি চাষিদের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক নিয়োগ করেছিল কৃষি দফতর। পরিকল্পনা ছিল ৬-৭টি গ্রাম নিয়ে তৈরি করা হবে একটি সার্কেল। সার্কেল পিছু থাকবে একজন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক। যদিও পরে সিদ্ধান্ত হয় প্রতি পঞ্চায়েত পিছু একজন করে কৃষি প্রযুক্ত সহায়ক থাকবে।

Advertisement

কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পঞ্চায়েত পিছু একজন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক তো দূর, ব্লক পিছু মাত্র একজন কৃষি সহায়ক রয়েছে হাওড়ায়। ফলে চাষের জমির মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে উন্নত মানের নানা প্রযুক্তির খবর চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে নানা সমস্যায় দ্রুত পরামর্শ পাওয়া থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে চাষিদের অভিযোগ।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, হাওড়ায় কমপক্ষে ২০৬ জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক থাকার কথা। এর মধ্যে ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫৭ জন, ১৪টি ব্লক পিছু এক জন করে ১৪ জন এবং জেলা ও মহকুমা কৃষি দফতরে বাকি কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের থাকার কথা। কিন্তু সেখানে আছেন মাত্র ২৫ জন। উলুবেড়িয়া মহকুমার ৯টি ব্লকে ১২ জন ও হাওড়া সদর মহকুমার ৫টি ব্লকে ১১ জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক রয়েছে। এছাড়া জেলা কৃষি দফতরে আছেন ২ জন। যদি সার্কেলপিছু ধরা হয়, তা হলে সংখ্যাটা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন কোনও নিয়োগ না হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সমস্যা যে হচ্ছে তা ঠিক। তবে কিছু অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করে তাঁদের দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। কৃষি প্রযুক্তি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই সমস্যা মিটে যাবে আশা করছি।’’

Advertisement

কৃষির উন্নতির জন্য কৃষি দফতর বিভিন্ন সময় নানা উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসে। সে সব চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। চাষিদের প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনে মাঠে গিয়ে তাঁদের প্রযুক্তিগুলো হাতে কলমে শেখানোর কাজও করেন তাঁরা। সম্প্রতি কৃষি দফতর সয়েল হেল্থ কার্ড চালু করার প্রকল্প নিয়েছে। যেখানে চাষের জমির মাটি পরীক্ষা করে মাটির চরিত্র চাষিদের বলে দেওয়ার পাশাপাশি সেই মাটিতে কি ধরনের ফসল চাষ করা যাবে তাও জানিয়ে দেওয়া হবে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্লক কৃষি দফতর সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষের জমির মাটি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠাচ্ছে। যদিও এই কাজ করার কথা কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের। কারণ এর জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত কম হওয়ায় কৃষি দফতর সাধারণ কমীদের দিয়েই সেই কাজ করাচ্ছেন।

হাওড়ায় ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫ হাজার চাষির জমির মাটির নমুনা পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে জেলা কৃষি দফতর। কিন্তু পর্যাপ্ত কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক না থাকায় সেই কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলেও কৃষি দফতর সূত্রে খবর। এছাড়া কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের এক ধরনের অ্যাপ সরবরাহ করা হয়। যার সাহায্যে কোনও চাষির চাষে সমস্যা ( পোকা লাগা, ধসা রোগ লাগা বা অন্যান্য রোগ) হলে ওই কৃষি প্রযুক্তি সহায়করা সংশ্লিষ্ট চাষির জমিতে গিয়ে ছবি তুলে তা জেলা বা ব্লক কৃষি আধিকারিককে পাঠিয়ে দেন। তিনি তা দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় পরামর্শ চাষিকে জানিয়ে দেন। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সেই সুযোগ থেকে চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

আবার ব্লক বা জেলা কৃষি দফতরে চাষিরা ঠিকমতো আসতে না পারায়, চাষে কোন সময় কী সার দেওয়া দরকার তার জন্য বাধ্য হচ্ছেন এলাকার সারের দোকানদারের উপর নির্ভর করকতে। কিছুদিন আগে উদয়নারায়ণপুরে আলু চাষে ধসা রোগ লাগে। কিন্তু সে জন্য কী করা উচিত তা যথাসময়ে জানতে পারেননি চাষিরা। একই সমস্যা ধান চাষের ক্ষেত্রেও। উদয়নারায়ণপুরের চাষি সঞ্জয় সামন্ত, নিখিল শাসমল, বাগনানের কাশীনাথ সামন্ত বলেন, ‘‘চাষের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কোনও পরামর্শই কার্যত পাই না। একে তো কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের দেখা মেলে না, তার উপর ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছেও সব সময় যাওয়াও যায় না। ফলে কোনও সমস্যা হলে সারের দোকানদাররাই ভরসা। অথচ চাষিদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্প রয়েছে বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু তার সুযোগ পাচ্ছি কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন