ডেঙ্গিতে মৃত্যু বালিকার, পুর পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ

দক্ষিণ হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার পি কে রায়চৌধুরী লেনের বাসিন্দা দশ বছরের এক বালিকার। মৃতার নাম অক্ষিতি দাস (১০)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫৫
Share:

অক্ষিতি দাস। নিজস্ব চিত্র

প্রায় প্রতিদিনই ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর আসছে হাওড়া এবং কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এ বার মৃত্যু হল

Advertisement

দক্ষিণ হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার পি কে রায়চৌধুরী লেনের বাসিন্দা দশ বছরের এক বালিকার। মৃতার নাম অক্ষিতি দাস (১০)।

শনিবার দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে হয়ে মৃত্যু হয় ডেঙ্গি আক্রান্ত অক্ষিতির। কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া অক্ষিতি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। পরিবার সূত্রের খবর, কালীপুজোর দু’দিন আগে তার জ্বর হয়। পরিজনেরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ওষুধ দেন। তাতেও জ্বর না কমায় রক্তপরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ভাইফোঁটার রাতে অক্ষিতিকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার তার প্লেটলেট ১৫,০০০-এ নেমে যায়।

Advertisement

এর আগে উত্তর হাওড়ার বেলগাছিয়া এলাকা ও মালিপাঁচঘরার ঘুসুড়িতে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গিতেই যে মৃত্যু, তা স্বীকার করেনি। হাওড়া পুরসভাও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেনি।

এ দিন অক্ষিতির পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, মোড়ে মোড়ে বাসিন্দাদের জটলা। শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা পাড়ায়। যে ফ্ল্যাটের তিনতলায় অক্ষিতি থাকত, তার নীচে ভিড় করেছেন আশপাশের বাসিন্দারা। সকলেরই চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ। অক্ষিতির মেসোমশাই শান্তনু দাস বলেন, ‘‘ওকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তখন প্লেটলেট ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ছিল। আচমকা প্লেটলেট এক ধাক্কায় ১৫ হাজারে নেমে যায়। আর তার পরেই তো এত বড় অঘটন!’’

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ অক্ষিতির বাবা অভীক দাস। দিশেহারা অবস্থা মায়েরও। তাঁদের কোনও ভাবেই সামলে রাখা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। আতঙ্কিত এক বাসিন্দার প্রশ্ন, ‘‘এই অসুখে আরও কত বাবা-মায়ের কোল খালি হবে?’’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই এলাকায় কোনও পুর পরিষেবা নেই। চারদিকে জমা আবর্জনা। নিয়মিত নর্দমা সাফাই হয় না। সাফাইকর্মীদের এলাকায় প্রায় দেখাই যায় না। পুকুরে পড়ে থাকা আর্বজনায় থমকে আছে জল। মশার লার্ভা কিলবিল করছে সেখানে।

নজরে পড়ল, অক্ষিতির ফ্ল্যাটে ঢোকার বাঁ দিকেই ঝোপঝাড়। তার মধ্যেই স্তূপ হয়ে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকে মোড়া জঞ্জাল। বাড়ি থেকে দূরে পুকুর এবং নালাতেও প্রচুর আবর্জনা পড়ে কার্যত সেগুলি বুজে গিয়েছে। এক প্রতিবেশী অরুণ রায় বলেন, ‘‘আমরা গত সাত বছর ধরে হাওড়া পুরসভার সমস্ত রকম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। এলাকার নর্দমাগুলি নিজেরাই দেখুন। বুঝতে পারবেন।’’ অন্য প্রতিবেশী চৈতালি ঘোষালের কথায়, “বরং আমরাই চাঁদা তুলে সাফাইকর্মীদের দিয়ে এলাকার নিকাশি নালা পরিষ্কার করাই।’’ স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা দীপালি রায়ের অভিযোগ, ‘‘এখানে এত মশা যে, মশারি গায়ে দিয়ে ঘুরলে বোধহয় ভাল হবে। এ সব কাকে বলব? পুরসভার কোনও প্রতিনিধিকে গত এক বছর ধরে এলাকায় দেখিনি!’’

যাবতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে হাওড়ার পুর কমিশনার তথা পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘পুর পরিষেবা নিয়ে এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে তদন্ত করার নির্দেশ দিচ্ছি। যদি এই সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement