পুলিশে নজর রাখতে অ্যাপই এখন গোয়েন্দা

সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর ও জোন-২) রণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব গাড়ির উপরে ঠিকমতো মনিটরিংয়ের জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এতে কাজের গতিও বাড়বে।’’

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৯
Share:

পথদিশা: অ্যাপ। নিজস্ব চিত্র

এ বার নজরদারের উপরেই নজরদারি!

Advertisement

এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্ব যাঁদের হাতে, সম্প্রতি তাঁদের উপরেই ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে শুরু করেছে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট। থানা থেকে শুরু করে কমিশনারেটের টহলদারি গাড়ি, এমনকী অ্যাম্বুল্যান্সও— কে কোথায় কী করছে, তার উপরে সজাগ নজর থাকছে পুলিশকর্তাদের। হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর ও জোন-২) রণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব গাড়ির উপরে ঠিকমতো মনিটরিংয়ের জন্যই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এতে কাজের গতিও বাড়বে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য পরিবহণ দফতরের সহযোগিতায় মোট ৪১টি গাড়িতে বসানো হয়েছে একটি করে জিপিএস প্রযুক্তির মোবাইল। সেই মোবাইলের মাধ্যমেই কমিশনারেট এলাকার পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সের অবস্থানের তথ্য পরিবহণ দফতরের ‘পথদিশা’ অ্যাপের সার্ভারে পৌঁছচ্ছে। আর সেই অ্যাপকে ব্যবহার করেই সব তথ্য মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশের কন্ট্রোল রুম। এর জন্য কন্ট্রোল রুমে প্রায় ৬০ ইঞ্চির দু’টি মনিটরও বসানো রয়েছে। তাতেই ফুটে ওঠা এলাকার মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে ৪১টি গাড়ি কখন কোথায় যাচ্ছে এবং কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement

কিন্তু ‘পথদিশা’ অ্যাপটি সাধারণ মানুষও ব্যবহার করতে পারেন। তা হলে তো পুলিশের গাড়ির অবস্থান-গতিপ্রকৃতি সহজেই জানতে পারবে চোর, দুষ্কৃতীরাও! সেটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি পুলিশকর্তা ও রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তাদের। তাঁদের দাবি, ওই অ্যাপের নির্দিষ্ট একটি মডিউল রয়েছে। যা অন্য কারও পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘পথদিশা অ্যাপের মধ্যে ‘রোড সেফটি’ বলে একটি আলাদা অংশ (মডিউল) রয়েছে। সেটাই হাওড়া সিটি পুলিশকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।’’

কমিশনারেট সূত্রে খবর, এইচআরএফএস এবং আরএফএস মিলিয়ে ১০টি গাড়ি, দু’টি ক্যুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি, ৮টি ‘কিরণ’ অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়াও গোটা কমিশনারেটের ১৪টি থানার ২১টি আরটি মোবাইল গাড়িতে রয়েছে ওই মোবাইল। এর ফলে কী সুবিধা হচ্ছে? ধরা যাক ১০০ ডায়ালে একটি ফোন এল, তাতে জিটি রোডে সত্যবালা হাসপাতালের সামনে কেউ সাহায্য চাইছেন। এলাকাটি মালিপাঁচঘরা থানার এলাকায়। কিন্তু সেই সময়ে ওই থানার গাড়ি এলাকার ভিতরে টহল দিচ্ছে। সত্যবালা আসতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। কন্ট্রোল রুম মনিটরে দেখে নেবে ওই এলাকার একেবারে কাছে কোন থানার গাড়ি রয়েছে। হয়তো দেখা গেল জিটি রোডের জায়সবাল হাসপাতালের সামনে তখন বেলুড় থানার গাড়িটি রয়েছে। যার থেকে সত্যবালা হাসপাতালের দূরত্ব কয়েকশো মিটার। তখনই কন্ট্রোল রুম বেলুড় থানার গাড়িতে থাকা মোবাইলে ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবে।

আবার কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটার পরে সেই খবর কন্ট্রোল রুমে পৌঁছনো মাত্রই দেখা হবে সব থেকে কাছে কোন অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। তৎক্ষণাৎ সেখানে বার্তা পৌঁছবে। এ ছাড়াও অনেক সময়েই থানার টহলদারি ভ্যান ঠিকমতো এলাকায় না ঘোরার অভিযোগ ওঠে। এই প্রযুক্তিতে কোন আরটি মোবাইল গাড়ি কোথায় ঘুরছে এবং কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা সহজেই জানবে কন্ট্রোল রুম। পুলিশকর্মীদের একাংশের মতে, পুলিশকর্তারাও প্রয়োজনে খুব সহজেই যে কোনও গাড়ির অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি জানতে পারবেন। ফলে আর কেউ কোনও অজুহাত তৈরি করে ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছনো বা না যাওয়ার সাফাইও দিতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন