পথ চলতে ফুটতে পারে ব্যবহৃত সিরিঞ্জের সূচ 

বিষাক্ত বর্জ্যে ঢাকছে আরামবাগের চৌহদ্দি

যত্র তত্র পড়ে প্লাস্টার, স্যালাইনের নল, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, রক্তমাখা তুলো, ক্যাথিটারের ব্যাগ... আরও কত কী! গৃহস্থালির আবর্জনা তো বটেই, দূষিত চিকিৎসা-বর্জ্যেও ছয়লাপ হচ্ছে আরামবাগ শহর।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১২
Share:

আতঙ্কের জঞ্জাল

যত্র তত্র পড়ে প্লাস্টার, স্যালাইনের নল, ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, রক্তমাখা তুলো, ক্যাথিটারের ব্যাগ... আরও কত কী!

Advertisement

গৃহস্থালির আবর্জনা তো বটেই, দূষিত চিকিৎসা-বর্জ্যেও ছয়লাপ হচ্ছে আরামবাগ শহর। শহরের ১৯টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্তত ২১টি নার্সিংহোম এবং ৮০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। সেই সব নার্সিংহোম এবং ওষুধের দোকানের আশপাশে প্রায় রোজই ওই সব চিকিৎসা-বর্জ্য ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বলে অভিযোগ। এমনকি, কয়েকবার ‘গর্ভফুল’ পড়ে থাকা নিয়েও হইচই হয়েছে। কুকুর-বিড়াল-কাক সেই সব বর্জ্য আরও দূরে টেনে নিয়ে যায়, এই অভিযোগও উঠছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের। এখানকার লিঙ্ক রোডের নেতাজি স্কোয়ার থেকে হাসপাতাল রোড এবং সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে মহকুমা হাসপাতাল, ব্লক অফিস, রবীন্দ্রভবন এবং আরামবাগ রেল স্টেশন। হাসপাতাল রোডের দু’ধারে সারি সারি ওষুধের দোকান। দোকানগুলিতে অন্তত ৫০ জন চিকিৎসকের ‘চেম্বার’ চলে। রাস্তায় হাঁটলেই চোখে পড়ে রয়েছে চিকিৎসা-বর্জ্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জীবনলাল ভৌমিকের ক্ষোভ, ‘‘যেখানে-সেখানে চিকিৎসা-বর্জ্য ফেলা নিয়ে ওষুধের দোকানগুলির কাছে প্রতিবাদ করে কোনও কাজ হয়নি।’’ ইয়াসিন হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘পুরসভায় জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ স্কুল শিক্ষক বিমল ভৌমিকের অভিযোগ, “চিকিৎসা-বর্জ্য নিয়ে পুরসভার উদাসীনতায় শহরের স্বাস্থ্যবিধান ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। নার্সিংহোম এবং ওষুধের দোকানগুলিও এ নিয়ে বিশেষ সচেতন নয়।’’

Advertisement

শহরবাসীর অনেকেরই অভিযোগ, চিকিৎসা-বর্জ্যের জন্য শহরে দূষণ বাড়ছে। কিন্তু এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে পুরসভা নির্বিকার। অভিযোগ মানেননি আরামবাগের পুরপ্রধান স্বপন নন্দী। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা এলাকার প্রতিটি ওষুধের দোকানকে বলে দিয়েছি, চিকিৎসা-বর্জ্য বালতিতে রেখে দিতে। পুরকর্মীরা প্রতিদিন গিয়ে তা সংগ্রহও করেন। এর পরেও কী ভাবে শহরে চিকিৎসা-বর্জ্য ছড়াচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

চিকিৎসা-বর্জ্য যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে থাকা যে কতটা ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক কল্যাণ ভুঁইয়া। তিনি জানান, চিকিৎসা-বর্জ্যের মধ্যে ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জের সূচ সবচেয়ে বিপজ্জনক। কোনও ভাবে তা ফুটলে হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি বা এডসের মতো রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, রক্ত-রস মাখা কোনও জিনিসই রাস্তায় পড়ে থাকা উচিত নয়। আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অসীম দে জানান, শহরের এই সমস্যা নিয়ে তাঁরা কয়েকবার আলোচনাসভার আয়োজন করেছেন। পুরসভারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তা সত্ত্বেও ওই সমস্যায় শহর খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

নার্সিংহোমগুলি অবশ্য যত্রতত্র চিকিৎসা বর্জ্য ফেলার অভিযোগ মানেনি। শহরের নার্সিংহোম-মালিক সংগঠনের পক্ষে উত্তম পালের দাবি, ‘‘আমাদের বর্জ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মতো একটি সংস্থা টাকার বিনিময়ে গাড়িতে প্রতিদিন তুলে নিয়ে যায়। কোনও ভ্যাট থেকে কুকুরে টেনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।” তবে, ওষুধের দোকানের মালিকদের পক্ষে একজন বলেন, “পুরসভার কাছে আমরা দাবি করেছিলাম দূষিত চিকিৎসা আবর্জনা ফেলার জন্য বর্জ্য-আধার করে দিতে। কিন্তু তা হয়নি। রাস্তার গায়ে নিকাশি নালার গায়ে রেখে দিতে হয়। সে সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে পারে।”

কোন পথে এই সমস্যার সমাধান হয়, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন