জল-সঙ্কট নিয়ে তরজাতেই শেষ প্রচার

জলপ্রকল্প তৈরি হলেও পুর এলাকায় জল-সঙ্কট মেটেনি পাঁচ বছরেও। সেই সমস্যাকে তুলে ধরে গোটা প্রচার-পর্বে তৃণমূলকে বিঁধেছেন বিরোধী দলের নেতারা। ক্ষমতায় এলে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তৃণমূল আবার পাল্টা সমস্যা না মেটার দায় চাপিয়েছে কেন্দ্রের ঘাড়ে। দু’পক্ষের এই তরজাতেই এ বার পুরভোটের প্রচার জমল উলুবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার, প্রচারের শেষ দিনেও তার ব্যতিক্রম হল না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারের ফাঁকে শোনা গেল অসমাপ্ত ওই প্রকল্পের কথা।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১০
Share:

জলের জন্য এ ভাবেই চলে রোজ দীর্ঘ প্রতীক্ষা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জলপ্রকল্প তৈরি হলেও পুর এলাকায় জল-সঙ্কট মেটেনি পাঁচ বছরেও।

Advertisement

সেই সমস্যাকে তুলে ধরে গোটা প্রচার-পর্বে তৃণমূলকে বিঁধেছেন বিরোধী দলের নেতারা। ক্ষমতায় এলে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তৃণমূল আবার পাল্টা সমস্যা না মেটার দায় চাপিয়েছে কেন্দ্রের ঘাড়ে। দু’পক্ষের এই তরজাতেই এ বার পুরভোটের প্রচার জমল উলুবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার, প্রচারের শেষ দিনেও তার ব্যতিক্রম হল না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারের ফাঁকে শোনা গেল অসমাপ্ত ওই প্রকল্পের কথা।

বাম আমলে ২০০৬ সালে কেন্দ্রের ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ বা ‘জেএনএনইউআরএম’ প্রকল্পে উলুবেড়িয়ার জগদীশপুরে জলপ্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। ওই প্রকল্পে গঙ্গার জল তুলে তা পরিশোধন করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহের কথা। ২০১১ সালে কেএমডিএ জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করে। উলুবেড়িয়া পুরসভায় তখন ক্ষমতায় তৃণমূল।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি পর্যায়ে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৬৩ কোটি টাকায় প্রকল্পটি গড়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে পাইপলাইন পাতা এবং উঁচু জলাধার তৈরির জন্য ১২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় ৪৮ কোটি টাকার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজই এখনও শেষ হয়নি। অর্থাৎ, পাইপলাইন বসেনি গোটা পুর এলাকায়। ফলে, বাউড়িয়া, চেঙ্গাইল-সহ ৮-১০টি ওয়ার্ডে এখনও পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয় না। সে সব এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা পুকুর এবং নলকূপের জল।

পাঁচ বছরেও যে বাসিন্দাদের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়নি, সেটাই এ বার পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অস্ত্র করেছে বিরোধীরা। সব বিরোধী দলই তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারেও সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে তারা প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতিরও অভিযোগ তুলেছে।

বামেদের অভিযোগ, তাদের আমলে তৈরি হওয়া ওই প্রকল্পের কাজ তৃণমূল বোর্ড শেষ করতে পারেনি। বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা তথা এ বারের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘ওরা নিজেরা তো কিছুই করতে পারল না। আমাদের তৈরি করা প্রকল্পকে নিজেদের বলে চালাতে চাইছে। যে প্রকল্প এত দিনে সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা, সেই প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশেরই কাজ শেষ হল না।’’ ক্ষমতায় এলে তারা তৃণমূল বোর্ডের দুর্নীতির তদন্ত করবেন এবং বাকি কাজ শেষ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সাবিরুদ্দিন।

একই সুরে বিজেপির জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি গৌতম রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল বোর্ড দ্বিতীয় দফার কাজের শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) দিতে পারেনি। বহু টাকার দুর্নীতি করেছে। কেন্দ্র সরকার সেই হিসাব চেয়ে জলপ্রকল্পের তৃতীয় দফার কাজের টাকা আটকে রেখেছে। হিসাব দিলেই টাকা পাওয়া যাবে।’’ ক্ষমতায় এলে বিগত বোর্ডের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানানোরও আশ্বাস দিয়েছেন গৌতমবাবু। তৃণমূলকে দুষেছেন কংগ্রেস প্রার্থী পম্পা ধাড়াও।

অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। প্রচারে তারা দাবি করেছে, জলপ্রকল্প তাদের হাতেই তৈরি। দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘বাম আমলে জলপ্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যেমন পাইপলাইন পাতা, জলাধার তৈরি হয়েছে আমাদের সময়ে। রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্র সরকার অসহযোগিতা করায় কাজ আটকে রয়েছে। ফের ক্ষমতায় এলে আমরা কাজ শেষ করব।’’

গত বছরের মাঝামাঝি তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার পর থেকে এত দিন প্রশাসক হিসেবে পুরসভা চালাচ্ছেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল। ওই প্রকল্প নিয়ে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

তবে, পুর এলাকার বাসিন্দারা চান, ক্ষমতায় এসে নতুন বোর্ড দ্রুত সমস্যা মেটাক। কিন্তু সেই বোর্ড কাদের দখলে যায়, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন