পেটের ভাত জোগাড়ই এখন চ্যালেঞ্জ আরজিনার

২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর। চোর সন্দেহে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী কোরপান শা’কে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে। ফের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

জরির কাজ করেই দিন গুজরান আরজিনার। ছবি - সুব্রত জানা।

২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর। চোর সন্দেহে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী কোরপান শা’কে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে। ফের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে। এখানেও স্রেফ সন্দেহের বশে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গত মঙ্গলবার রাতে কোলাঘাটের সাহাপুর গ্রামে এক হোসিয়ারি কারখানা চত্বরে সিরাজুল ইসলামকে (২২) মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে কারখানার দুই মালিক ও চার কর্মীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

Advertisement

কোরপান, সিরাজুল দু’টি আলাদা ঘটনা হলেও দু’জনেরই পারিবারিক অবস্থা প্রায় একই রকম। অভাবের পরিবারে সিরাজুলের চিকিৎসা করাতে পারেনি তাঁর পরিবার। রঙ-মিস্ত্রির কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালান বাবা। সিরাজুলের ঘটনা যেন আর বেশি করে আরজিনাকে মনে করিয়ে দিয়েছে স্বামীর কথা।

সেদিনের কথা আজও ভুলতে পারেন না কোরপানের স্ত্রী আরজিনা বেগম। ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন কোরপান। রাতে বাড়ি না ফেরায় আরজিনা চিন্তায় ছিলেন। পর দিন প্রতিবেশীদের কলকাতায় পাঠান স্বামীর খোঁজ করতে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। শেষ পর্যন্ত রাতে টেলিভিশনের পর্দায় স্বামীর দেহের ছবি দেখে বুঝতে পারেন তাঁর কতবড় সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সংসারের একমাত্র আয়ের লোকটা চলে গেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে কী খাবেন। আগেও দু’বেলা ঠিকমতো ঝুটত না। কিন্তু এ বার তো ভিক্ষা করতে হবে। না, এখনও তেমন অবস্থা হয়নি আরজিনার। ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে যে ভাবে হইচই হয়, তাতে অনেকেই সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। দিয়েছিলেন অনেক প্রতিশ্রুতিও। তাতে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা সুরাহা হলেও বর্তমানে রোজের ভাত জোগাড়ই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে আরজিনার কাছে। পাঁচ নাবালক ছেলেমেয়ের মুখে অন্ন জোগাতে জরির কাজই সম্বল আরজিনার। অথচ স্বামীর মৃত্যুর পরপরই সহানুভূতির ঝড় আছড়ে পড়েছিল তাঁর প্রতি। পরে সময় যত গড়িয়েছে, প্রচারের আলোও সরে গিয়েছে আরজিনার উপর থেকে। উলুবেড়িয়ার বাণীতবলা শাহপাড়ায় টালির ছাউনি দেওয়া এক কামরার পাকা বাড়িতে বসে ক্ষোভের সঙ্গে সে সব উগরে দিচ্ছিলেন আরজিনা। বলেন, ‘‘অনেকে সাহায্য করবেন বলেছিলেন। যে টাকা পেয়েছিলাম তা দেড় বছরে সংসার চালাতে গিয়ে শেষ। এখন দিন আনি দিন খাই অবস্থা। স্বামীর উপর যে অন্যায় হয়েছে তার বিচার চাই। কিন্তু মামলার কী হল জানি না।’’

দুই মেয়ে তিন ছেলে। বড় ছেলে আজিরুদ্দিন শাহের বয়স ১৪। ছোট মেয়ের বয়স দেড় বছর। কোরপানের মৃত্যুর সপ্তাহখানেক বাদে তার জন্ম। উদয়নারায়ণপুরের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ছেলেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে নিলেও পরে সেখান থেকে সে চলে আসে। ডোমজুড়ের অঙ্কুরহাটিতে দর্জির কাছে কাজ করছে সে। আরজিনা জানান, সংসার চলছে না। বাধ্য হয়েই ওকে কাজে লাগাতে হয়েছে। জরির কাজ করে সপ্তাহে শ’ পাঁচেক টাকা আসে। তাতে সংসার চলে? অনেক সময়ে আধপেটা থাকতে হয়। কষ্ট হয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির জন্য।

স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে এন্টালি থানায় গিয়ে এফআইআর করেছিলেন। তবে স্বামীর খুনের তদন্তের কী হাল তা তিনি জানেন না।

রমজান মাস শুরু হয়েছে। রোজাও রেখেছেন আরজিনা। তবুও দুপুরে রান্নার জোগাড় করতে করতেই বলেন, ‘‘আমার না হয় রোজা আছে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের জন্য তো রাঁধতে হবে। না হলে ওরা খাবে কী?’’ স্বামী হারা সহায়-সম্বলহীন আরজিনার কাছে এখন এটাই প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement