জাঙ্গিপাড়া থেকে বাংলাদেশে ঘরের পথে সালমা

কেমন করে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি! মুখে কথা সরত না। ঠাঁই হয় হুগলির জাঙ্গিপাড়ার একটি বেসরকারি হোমে। শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশে ওই মহিলার বাড়ির সন্ধান মিলেছে। তোড়জোড় চলছে তাঁকে ঘরে ফেরানোর।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share:

কেমন করে যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি! মুখে কথা সরত না। ঠাঁই হয় হুগলির জাঙ্গিপাড়ার একটি বেসরকারি হোমে। শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে বাংলাদেশে ওই মহিলার বাড়ির সন্ধান মিলেছে। তোড়জোড় চলছে তাঁকে ঘরে ফেরানোর। কলকাতার বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের গোড়ায় বছর পঁয়ত্রিশের ওই মহিলা কোনও ভাবে আরামবাগে চলে আসেন। আরামবাগ মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে ওই বছরের এপ্রিলে পুলিশ ‘ভবঘুরে’ ওই মহিলাকে জাঙ্গিপাড়ার জ‌নশিক্ষা প্রচার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেই থেকে এই হোমেই আছেন সালমা বেগম নামে ওই মহিলা। তবে, প্রথম দিকে তাঁর নাম জানতে পারেননি হোম কর্তৃপক্ষ।

হোম কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথম দিকে মহিলা কথা বলতেন না। প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। তাঁর মানসিক সমস্যা ছিল। এখানে তাঁর চিকিৎসা হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। হোমের কাউন্সিলর সুদেষ্ণা দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসায় সাড়া মেলে। মহিলা ৪-৫ মাস পরে কথা বলতে শুরু করেন। নিজের নাম বলেন। বাড়ি জানান, বাংলাদেশের দাইবান্দা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক চিঠি পৌঁছয়নি। তবুও আমরা চেষ্টা ছাড়িনি।’’

Advertisement

হোম সূত্রের খবর, সুমিত চক্রবর্তী নামে হোমের এক সমাজকর্মী ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাঁর এক পরিচিতের সঙ্গে ওই মহিলার ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেন। সুমিতবাবুর পরিচিত ব্যক্তি সালমার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে বের করেন। মহিলার বাড়ির লোকের সঙ্গে হোম কর্তৃপক্ষের কথা হয়। বাড়ির লোকজন ই’মেল করে মহিলার ছবি এবং পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেন প্রমাণ হিসেবে। বিষয়টি কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনেরও নজরে আসে। শুক্রবার ওই দফতরের লোকজন হোমে এসে মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। সালমা তাঁদের জান‌ান, তিনি অসুস্থ ছিলেন। ভাল ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করার কথা বলে এক মহিলা তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন। তবে কী করে আরামবাগে পৌঁছেছিলেন, তা তিনি বলতে পারেননি।

বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দেশে মহিলার স্বামী-সন্তান, বাবা-মা, ভাই সকলেই আছেন। ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথাও হয়েছে। ওই দফতরের তরফে আতাউর সালাম বলেন, ‘‘আমরা জাঙ্গি‌পাড়ার হোমে গিয়ে ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে এসেছি। বাংলাদেশে ওই ঠিকানাতেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ওঁকে বাড়ি পাঠানো হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।’’

সুদেষ্ণাদেবী বলেন, ‘‘ঘরের মেয়ে বা বউ ঘরে ফিরবে, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে। ওঁর ঠিকানা বের করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। ভালয় ভালয় বাড়ি পৌঁছে গেলে আমাদের চেষ্টা সার্থক হবে।’’

ঘরে ফেরার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন সালমা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন