আগ্রহী: এসডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ভিড়। উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা
মনোনয়ন-পর্বে তেতে থাকা এ রাজ্যে এক অন্য ছবি দেখা গেল হাওড়া জেলায়!
শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি, মারধর, বাধা দান এমনকী কালি মাখানোর মতো অভিযোগও যেখানে উঠেছে, সেখানে হাওড়া কার্যত অভিযোগশূন্য! দু’একটি ক্ষেত্রে গোলমাল যে হয়নি, তা নয়। কিন্তু সার্বিক শান্তিপূর্ণ ভাবে সোমবার মনোনয়নের শেষপর্বে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। বিরোধীদের কেউ কেউ অবশ্য একে ‘শ্মশানের শান্তি’ বলে কটাক্ষ করেছেন। শাসকদল পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কিছু আসন জিতে গিয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
কার্যত অশান্তিহীন মনোনয়ন কী ভাবে সম্ভব হল?
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোনও ব্লকেই বিরোধীদের তরফ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না-দেওয়া নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একটি অভিযোগ এসেছিল। তদন্ত করে দেখা গিয়েছে সেগুলি ভুয়ো। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা জেলা এবং ব্লক স্তরে সর্বদলীয় বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। প্রত্যেকেই সহযোগিতা করেছেন।’’ গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতাদের আমরা জানিয়েছিলাম সবাই মিলেমিশে মনোনয়নপত্র জমা দেব। দলের কর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কাউকে বাধা দেওয়া যাবে না। সেটাই হয়েছে।’’ একই কথা জানান হাওড়া সদর তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ও।
কিন্তু মনোনয়ন পর্বের চতুর্থ দিনে শাসকদলের ‘বাধা’ দেখা গিয়েছে জগৎবল্লভপুরে। সেখানে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সিপিএম এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধ হয়। অন্যদিকে, প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরে ররিবার রাতে সাঁকরাইলের দুইল্যার কাছে আন্দুল রোড অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সাঁকরাইল ব্লকের যে চারটি পঞ্চায়েত হাওড়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে পড়ে সেখানাকর বিধায়ক ব্রজমোহন মজুমদারের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ, প্রধান এবং উপ্রধানকে বাদ দিয়েছেন এই বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় সভাপতি তপন মিত্র। বিধায়ক জানান, সমস্যা একটা হয়েছে। তবে তা দলীয় পর্যায়ে বসে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হবে। তপনবাবুর দাবি, ‘‘অনেক আসন সংরক্ষিত হয়ে পড়ায় কয়েকজনকে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’ রবিবার রাতেই আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের দেউলগ্রামের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আমতা বিধানসভা এলাকার ১৮টি পঞ্চায়েতে সিপিএমের সঙ্গে জোট করে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। অসিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘জোটে ভয় পেয়েই তৃণমূল বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
তিনটি ঘটনাকেই ব্যতিক্রমী বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। মনোনয়ন পর্বে ১৪টি ব্লকের প্রতিটিতে ছিল ত্রি-স্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, অন্য জেলায় মহকুমাশাসকের অফিসেও মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বিরোধীরা শাসকদলের হাতে আক্রান্ত হলেও হাওড়ায় হননি। তবে ব্লক স্তরে আমাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা হয়েছে।’’
বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকের অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা পাল্টা অশান্তি চাইনি। ফলে, শ্মশানের শান্তি বজায় থেকেছে।’’