দুই নেতার দ্বৈরথই সিঙ্গুরে মাথাব্যথা দলের

 ‘গুরু’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘শিষ্য’ বেচারাম মান্নার ছায়াযুদ্ধের কারণে এ বার সিঙ্গুরে বহু আসনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েছেন নির্দল প্রার্থী। তৃণমূলের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব অনেক চেষ্টা করেছিলেন বেচারাম-রবীন্দ্রনাথ দ্বন্দ্ব থামাতে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০২:৩২
Share:

চর্চা: বই নিয়ে মগ্ন রবীন্দ্রনাথবাবু। (ডান) জিমে শরীরের কসরত বেচার। নিজস্ব চিত্র

ফের একবার সম্মুখ সমরে এক সময়ের ‘গুরু-শিষ্য’!

Advertisement

জমি আন্দোলনোত্তর সিঙ্গুরে দু’জনের অঘোষিত যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে। তার পরে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত, ’১৪ সালের লোকসভা, ’১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন— একই ‘ল়ড়াই’ দেখেছে সিঙ্গুর। এ বার পঞ্চায়েত ভোটেও দেখছে। সেটাই মাথাব্যথা শাসকদলের। কারণ, দু’জনেই যে ‘ঘরের লোক’।

‘গুরু’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ‘শিষ্য’ বেচারাম মান্নার ছায়াযুদ্ধের কারণে এ বার সিঙ্গুরে বহু আসনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েছেন নির্দল প্রার্থী। তৃণমূলের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব অনেক চেষ্টা করেছিলেন বেচারাম-রবীন্দ্রনাথ দ্বন্দ্ব থামাতে। কিন্তু জট কাটেনি। দু’জনের সংঘাতের ছবিটা স্পষ্ট পরিসংখ্যানেই।

Advertisement

সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিততে আসন ৪৭টি। সেখানে নির্দল প্রার্থী ৩৮ জন। ১৬টি পঞ্চায়েতের ২৪০টি আসনে এই সংখ্যা ১৪০। নির্দলের কার্যত পুরোটাই শাসকদলের ‘গোঁজ’। জেলা পরিষদের একটি আসনে নির্দল হিসেবে লড়ছেন তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক। তাঁর প্রতিপক্ষ দলের গত বারের জয়ী প্রার্থী পূর্ণিমা ঘোষ (মালিক)। পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি প্রতিমা দাসের বিপক্ষেও রয়েছেন দলের ‘গোঁজপ্রার্থী’। নসিবপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোবিন্দ ধাড়ার বিরুদ্ধেও নির্দল রয়েছেন। এমন উদাহরণ বহু। বিবদমান গোষ্ঠীর এক পক্ষ বিধায়ক রবীন্দ্রনাথের। অন্য পক্ষ দলের ব্লক সভাপতি বেচারামের।

প্রার্থী বাছাইয়ের সময় দলীয় বৈঠকে বেচারামকে রীতিমতো আক্রমণ করেছিলেন প্রবীণ বিধায়ক। বেচারামও ছেড়ে কথা বলেননি। রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তার পরে দু’জনে এক সঙ্গে মিছিলে হাঁটলেও সেই ‘নৈকট্য’ যে আসলে দৃষ্টিভ্রম, সিঙ্গুরের রাজনীতিতে চোখ-কান খোলা রাখলেই তা পরিষ্কার। পরিস্থিতি সামলাতে তৃণমূলের হুগলি জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস দায়িত্ব দিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবকে। সমস্যা মেটাতে দিলীপ কখনও ছুটেছেন সিঙ্গুরে, কখনও বেচারাম-রবীন্দ্রনাথ হাজির হয়েছেন উত্তরপাড়ায়। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। টিকিট নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যেই ভোটের লড়াই থেকে সরে আসেন গত বারের জেলা পরিষদ সদস্য তথা বেচারামের স্ত্রী করবী। দিন কয়েক আগে বিধায়কের বিরুদ্ধে এক ‘গোঁজপ্রার্থী’র বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান দলীয় কর্মীদের একাংশ।

কেন মিটছে না দুই নেতার দ্বন্দ্ব?

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, এলাকায় প্রভাব কার বেশি থাকবে, এ নিয়েই দু’জনের ‘ইগো’র লড়াই! বেচারাম অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি হরিপালে প্রচারে ব্যস্ত।’’ রবীন্দ্রনাথবাবু মেনেছেন, ‘‘দলের গোঁজপ্রার্থীদের সরাতে চেষ্টা করা হয়েছিল। তবু সমস্যা পুরোটা মেটেনি। তবে, আমরা জেতার ব্যাপারে আশাবাদী।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের অবশ্য দাবি, ‘‘ওখানে দলের সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে।’’

বেচারামের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল সিপিএমের হাত ধরে। পরে মমতার হাত ধরেন। ২০০১ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ সিঙ্গুরের বিধায়ক। প্রথম দু’বার তাঁকে জেতাতে কম পরিশ্রম করেননি বেচারাম। তখন থেকেই সিঙ্গুরের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ দু’জনকে ‘গুরু-শিষ্য’ হিসেবেই চেনেন। জমি আন্দোলনের সময়ে দু’জনের সুসম্পর্ক হোঁচট খায় রাজ্যে পালাবদলের পরে। দু’জনেই তৃণমূল সরকারের প্রথম দফার মন্ত্রী ছিলেন। সম্পর্ক আর মেরামত হয়নি। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন। এই আবহে অন্য অঙ্ক কষছে বিরোধীরা। বামফ্রন্ট এবং বিজেপি এখা‌নে প্রায় সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূলের দ্বন্দ্বে তাদের শিকে ছিঁড়তে পারে বলে আশায় দুই শিবিরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন