Panchayat Poll 2018

আগে সিপিএম মারত,এখন মারে তৃণমূলও

ফ্লাশব্যাক ২০০৩। গোঘাট-১ ব্লকের ভূমি দফতরের অফিসের কাছে দরমার বেড়ার দলীয় কার্যালয় খুলেছে তৃণমূল। বেশিরভাগ সময়েই তালাবন্ধ। কে খুলবে? প্রাণের মায়া আছে না! তৃণমূল তখন বিরোধী।

Advertisement

প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১৬:৫৫
Share:

বন্ধ: ২০১১ সাল থেকে তালাবন্ধ পড়ে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়। গোঘাটের শান্তিপুরে। ছবি: মোহন দাস

খাঁ খাঁ রোদে খণ্ডহরের মতো দাঁড়িয়ে বাড়িটা। সামনে ঝোপজঙ্গল। বাইরের গ্রিলে মরচে ধরা তালা। ভিতরটা লন্ডভন্ড। সামনে গাছে ঢাকা বোর্ড জানান দিচ্ছে, এটাই এখন গোঘাটের শান্তিপুরের সিপিএম কার্যালয়! সাত বছরে কারও পা পড়েনি। সিপিএম এখন বিরোধী।

Advertisement

ফ্লাশব্যাক ২০০৩। গোঘাট-১ ব্লকের ভূমি দফতরের অফিসের কাছে দরমার বেড়ার দলীয় কার্যালয় খুলেছে তৃণমূল। বেশিরভাগ সময়েই তালাবন্ধ। কে খুলবে? প্রাণের মায়া আছে না! তৃণমূল তখন বিরোধী।

ফি-বছর বন্যা আর ভোটের বছরে হানাহানি—আরামবাগের সাধারণ মানুষের গা-সওয়া। ক্ষমতার পালাবদলের পরেও এখানে ভোটের মুখে ‘সন্ত্রাস’-এর চেনা ছবিটা কি পাল্টাল? পরিসংখ্যান বলছে, এ বারে ভোট-ময়দানে বিরোধীরা কার্যত নেই। নেই বিরোধীদের প্রচারও। ‘‘এতেও সন্ত্রাস বুঝতে পারছেন না?’— প্রশ্ন ছুড়ে দেন আরামবাগের এক চা-দোকানি। খানাকুল-২ ব্লকের নতিবপুরের এক খেতমজুরের খেদ, ‘‘এ এক আজব খেলা। আগে সিপিএম মারত। এখন তৃণমূ‌ল মারে। বোমা-বন্দুকের ছড়াছড়ি। শুধু সাধারণ মানুষের জীবনের কোনও উন্নতি নেই।’’

Advertisement

সন্ত্রাসের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন আরামবাগের ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বপন নন্দী। তাঁর দাবি, ‘‘সিপিএম আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে খুন করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, অত্যাচার হয়েছে মেয়েদের উপরেও। এখন সব অতীত।’’

অথচ, এ বারও মনোনয়ন-পর্বে বিরোধীদের মারধর, হুমকি, আরামবাগে সিপিএমের এরিয়া কার্যালয়ে হামলা, মহিলা প্রার্থীদের নিগ্রহ, গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের মুখে কালি লেপা— একের পর এক অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ বাম আমলেও তুলত বিরোধীরা। ৩৪ বছরের শেষ দু’বারের পঞ্চায়েত ভোটও কার্যত ছিল বিরোধীশূন্য! বিরোধী প্রার্থীদের বাড়িতে সাদা থান পাঠানোর অভিযোগও শোনা গিয়েছিল।

আরামবাগ মহকুমায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ইতিহাস বহু পুরনো। ছয়ের দশকে ভূমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যার সূচনা। একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল বালিখাদ আর গ্রাম দখলের লড়াই। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা, তখন সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেস বা শরিকদের লড়াই হতো। শেষ দিকে সেই লড়াই চলছিল তৃণমূলের সঙ্গে। খুন-জখম, বাড়িঘর জ্বালানো, হুমকি, হাত-পা ভেঙে দেওয়া কিছুই বাদ যায়নি। এখন ক্ষমতায় তৃণমূল। আক্রান্ত হচ্ছে বিরোধীরা। এর সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও সন্ত্রাসের মাত্রা বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।

আরামবাগের সিপিএম নেতা উত্তম সামন্ত বলেন, ‘‘মানছি আগে আমাদের কিছু ভুল ছিল। কিন্তু এই আমলে রাজনৈতিক সন্ত্রাস বহুগুণ বেড়েছে। নির্বাচনে দাঁড়াতে দেব না, এই মনোভাব আমাদের ছিল না।’’ একই সুর কংগ্রেস নেতা প্রভাত ভট্টাচার্যের গলাতেও, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাস অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। মেয়েদের গায়ে হাত তুলতেও ওরা ভাবছে না।’’

তৃণমূল নেতা স্বপনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘আসলে বিরোধীরা সংগঠনটাই গড়ে তুলতে পারেনি। মানুষ ওদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। তাই মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’’ গোঘাটের তৃণমূল নেতা ফরিদ খানেরও দাবি, ‘‘সিপিএম আমাদের বহু দিন ঘরে ফিরতে দেয়নি। মানুষ ওদের কখনও ক্ষমতায় ফেরাবে না।’’

ভোট আসে-যায়। কিন্তু আরামবাগে সন্ত্রাস বন্ধ হয় না— এমনই আক্ষেপ সাধারণ মানুষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন