উভয়সঙ্কটে পড়েছেন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতে জয়ী দুই সিপিএম প্রার্থী। কখনও তাঁরা বিজেপি-কে সমর্থনের প্রস্তাব পাচ্ছেন। কখনও প্রস্তাব আসছে তৃণমূলের থেকে। তাঁরা যাবেন কোথায়? এ বার ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে তাঁরাই যে নির্ণায়ক হয়ে উঠেছেন!
২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি পেয়েছে যথাক্রমে ১১টি এবং ৯টি। দুই সিপিএম প্রার্থী যদি বিজেপি-কে সমর্থন করেন, তা হলে ‘টাই’-এর মাধ্যমে বিজেপি বোর্ড গঠনের লড়াইয়ে যেতে পারবে। সেটা রুখতে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল। দুই সিপিএম প্রার্থীকে শাসকদল নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। বসে নেই বিজেপিও।
উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় সরাসরিই বলছেন, ‘‘এ বার সিপিএমের সামনে সুযোগ এসেছে প্রকৃত ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার। সত্যিই যদি সিপিএম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে চায়, তা হলে তারা প্রকাশ্যে বলুক বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে না।’’ অন্যদিকে বিজেপির জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যদি কেউ লড়াই করতে চায় তা হলে বিজেপিই হল উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম। চণ্ডীপুরে সিপিএম প্রমাণ দিক যে তারা সত্যিই সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াই চায় কিনা!’’
তাঁদের নিয়ে দড়ি টানাটানির কথা স্বীকার করেছেন রুপালি ঘড়ুই নামে এক সিপিএম প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দল থেকে নানা প্রস্তাব আসছে।’’ বিড়ম্বনায় পড়েছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের একাংশও। তাঁরা মনে করছেন, রূপালিদেবীরা বিজেপিকে সমর্থন করলে তাঁদের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। আবার তৃণমূলকে সমর্থন করলে শাসকদলের বিরুদ্ধে তাঁদের তোলা সন্ত্রাস এবং বুথ দখলের অভিযোগ ফিকে হয়ে যাবে।
স্থানীয় সিপিএম নেত্রী তথা হাওড়া জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য সমদূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছেন। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপি একই মুদ্রার দু’টি পিঠ। আমাদের দুই প্রার্থীকে কাউকে সমর্থন না-করে নিজেদের মতো করে কাজ করতে বলা হয়েছে।’’ কিন্তু এতে তো পরোক্ষ ভাবে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করা হল? মীনাদেবী বলেন, ‘‘দলের অবস্থান ষ্পষ্ট। কার কী সুবিধা-অসুবিধা হল তা আমাদের দেখার কথা নয়। এর অন্যথা হলে ওই দুই প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’’ দলের নির্দেশই তিনি মেনে চলবেন বলে রূপালি জানান। মীনাদেবী সমদূরত্বের কথা বললেও চাপের মুখে ওই দুই প্রার্থী কতদিন অটল থাকেন, সেটা ভাবাচ্ছে সিপিএম নেতৃত্বের একাংশকে।
বিদায়ী পঞ্চায়েত বোর্ডটি তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পঞ্চায়েতটি বিশ্বব্যাঙ্কের কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছে। তবু এ বার তৃণমূলের শেষরক্ষা হয়নি। ক্ষমতায় আসার জন্য যেখানে ১২টি আসনের দরকার ছিল, সেখানে এ বার ঝুলিতে ১১টি আসন। তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি পায়ের তলায় মাটি শক্ত করেছে। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ মানেনি। সাতটি আসন নিয়ে বিদায়ী বোর্ডে সিপিএম প্রধান বিরোধী দল। এ বার সেই তকমা গেলেও গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে তাদের দুই জয়ী প্রার্থীর।