অধ্যক্ষ পদে থাকবেন না বিরোধীরা

দুই জেলা পরিষদে নেই বিরোধীরাই

বিরোধীশূন্য হয়েছে হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলা পরিষদ। তার জেরে ছেদ পড়ল দীর্ঘদিনের একটি প্রথার। অধ্যক্ষ পদে দুই জেলা পরিষদে এ বার দেখা যাবে না বিরোধী দলের কাউকে।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০০:২৭
Share:

বিরোধীশূন্য হয়েছে হাওড়া ও হুগলি— দুই জেলা পরিষদ। তার জেরে ছেদ পড়ল দীর্ঘদিনের একটি প্রথার। অধ্যক্ষ পদে দুই জেলা পরিষদে এ বার দেখা যাবে না বিরোধী দলের কাউকে।

Advertisement

অধ্যক্ষ পদটি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের সমতুল। তাঁর অধীনে ১১ জনের কমিটি থাকে। কমিটিতে জনাপাঁচেক নির্বাচিত সদস্যও থাকেন। বাকিরা জেলা পরিষদের মুখ্য বাস্তুকার-সহ অন্যান্য আধিকারিক। পঞ্চায়েত আইনেই অধ্যক্ষ নির্বাচনের প্রথার কথা বলা আছে। বিরোধী দলের নেতাকেই এই পদে নির্বাচিত করতে হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা পরিষদ তো বটেই, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির কাজে নজরদারি করা অধ্যক্ষের কাজ। তাদের ভুল-ত্রুটি হলে তিনি সংশোধনের পরামর্শ দেন। অধ্যক্ষের প্রতি মাসে কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করার কথা। তা ছাড়াও অধ্যক্ষ পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতের কাজ পরিদর্শন করে কী পেলেন, তা প্রতি তিন মাস অন্তর জেলা পরিষদের যে সাধারণ সভা হয় তাতে পেশ করেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতের কোনও কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

কিন্তু এ বার কী হবে?

Advertisement

হাওড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর যা বলবে তাই করা হবে।’’ হুগলির বিদায়ী সভাধিপতি, তৃণমূলের মেহবুব রহমানের বক্তব্য, ‘‘সময় আসুক। কী হবে না হবে, তখনই ঠিক হবে। এ জন্য প্রশাসনের লোকজন আছেন।’’

পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতাকে অধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত করতে হবে, এটা আইন নয়, প্রথা। একান্ত যদি বিরোধী দলের কোনও সদস্য নির্বাচিত না-হন, তা হলে শাসকদলের মধ্যে্ থেকেই কাউকে এই পদে নির্বাচিত করতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর স‌ংযোজন, ‘‘বিরোধী দলের কেউ ওই পদে থাকলে গুরুত্ব অনেকটা বাড়ে। কিন্তু কেউ না থাকলে আর কী করা যাবে!’’

১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হাওড়া জেলা পরিষদ ছিল বামফ্রন্টের হাতে। বাম আমলে প্রতিবার বিরোধী দলের নেতাকে অধ্যক্ষের পদে নির্বাচিত করা হতো। ২০০৩ সালে অধ্যক্ষ হন তৃণমূলের শ্রীধর মণ্ডল। ২০০৮ সালে অধ্যক্ষ হন তৃণমূলের অজয় ভট্টাচার্য। ২০১৩ সালে জেলা পরিষদে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের অপর্ণা পুরকায়েত অধ্যক্ষ হন। শ্রীধরবাবু বলেন, ‘‘তখন বিরোধী সদস্য হিসাবে আমি একা ছিলাম। তবুও আমাকে অধ্যক্ষ নির্বাচন করা হয়েছিল। বহু গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে গিয়েছি। আমার রিপোর্ট জেলা পরিষদে গুরুত্ব পেত।’’

একই কথা বলছেন হুগলিতে বিভিন্ন সময়ে ওই পদে থাকা নেতারা। খানাকুলে জেলা পরিষদ আসনে জয়ী বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ বাম আমলে (১৯৯৩-২০০৩) ওই পদে ছিলেন। তিনিও বলেন, ‘‘ভয়ভীতি উপেক্ষা করতে পারলে অনেক কাজই করা যায়। তবে বিরোধী না-থাকলে শাসকদলকে নিজেদের মধ্য থেকেই অধ্যক্ষ ঠিক করতে হবে।’’

তথ্য সহায়তা: প্রকাশ পাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন