হাজার খানেক মানুষের বুথ দখল দেখলেন কনস্টেবল

ফেট্টিতে তৃণমূল আর মুখে রাম-নাম

বেলা ১ টা নাগাদ উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের ভেকুটাল প্রাথমিক স্কুলে যখন পুলিশ বাহিনী পৌঁছল, তখন তছনছ হয়ে গিয়েছে বুথ। জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অন্য ভোট কর্মীরা।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

বিভ্রাট: কৈজুরিতে পুলিশের সঙ্গে বাগযুদ্ধ মহিলাদের ছবি: সুব্রত জানা

বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল বুথের এক কিলোমিটার দূর থেকে। বেলা ১ টা নাগাদ উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতের ভেকুটাল প্রাথমিক স্কুলে যখন পুলিশ বাহিনী পৌঁছল, তখন তছনছ হয়ে গিয়েছে বুথ। জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অন্য ভোট কর্মীরা। আর একজন বন্দুকধারী কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ার— তাঁরাও ভয়ে কম্পমান।

Advertisement

প্রিসাইডিং অফিসার জেরম কুজুর বললেন, ‘‘প্রায় হাজার খানেক মানুষ ঢুকে পড়েন বুথে। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কনস্টেবলের কিছু করার ছিল না।’’ তিনিই জানালেন, ওই বুথে মোট ভোটার ১০৬৫। সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছিল ২১৮টি। কিন্তু তারপরই যে কী হয়ে গেল! অভিযোগ, দলে দলে লোক ঘরে ঢুকে পড়ে। কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলে কেউ কেউ। জেরমের কথায়, ‘‘ব্যালট পেপার কেড়ে নিজেরা ছাপ্পা মেরে ব্যালটবাক্সে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর আমাকে বাক্সগুলি সিল করতে বাধ্য করে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বুথে তাণ্ডব চালানোর সঙ্গে সঙ্গে বাইরে চলছিল বোমাবাজি। ফলে ততক্ষণে ভোটার লাইন ফাঁকা। যারা এ সব ঘটাল তাদের মাথায় নাকি তৃণমূলের পতাকা ফেট্টি করে বাঁধা ছিল। কিন্তু মুখে ছিল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। পুলিশ বাহিনী বুথে এলে বোমাবাজি বন্ধ হয়। স্লোগান বন্ধ হয়নি। স্কুলের পিছনে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে একদল যুবককে হকি স্টিক আর বোমা হাতে নিয়েই স্লোগান দিতে থাকে বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য বেশিক্ষণ এলাকায় থাকেনি। অন্যত্র গোলমালের খবর পেয়েই ফিরে যায় তারা। ফের শুরু হয় বোমাবাজি।

Advertisement

তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, ‘‘বিজেপি বুথে হামলা চালিয়েছিল।’’ বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘তৃণমূলের লোকজন ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিল। তা রোধ করতেই গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসেন।’’

তবে শুধু ভেকুটাল প্রাথমিক স্কুলই নয়, পুলিশি নজরদারির অভাবে নিরাপত্তার দৈন্য বেআব্রু হয়ে পড়ে এ দিন প্রতিটি এলাকায়। উলুবেড়িয়া মহকুমা জুড়েই বুথে বুথে ছাপ্পা, ব্যালট বাক্স লুঠ করে পুকুরে ফেলে দেওয়া, বুথের বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। কালীনগর পূর্ব প্রাথমিক স্কুলে বুথের দরজা ভেঙে একদল গ্রামবাসী ঢুকে পড়েন। ভোটকর্মীদের মারধর করে ব্যালটবাক্স তুলে ফেলে দেন পাশের পুকুরে। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। আলিপুকুর জেলেপাড়া প্রাথমিক স্কুলেও ব্যালট বাক্স ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ভোট। এ ক্ষেত্রে আবার অভিযোগ উঠেছে শাসকের বিরুদ্ধে। বাগনানের বাইনান পঞ্চায়েতের ২২টি বুথের সব ক’টি দখল হয়ে যায় সকাল ১০টার মধ্যে। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের লোকেরাই এ সব করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতি বুথের একজন কনস্টেবল এবং একজন সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিলেন। সেক্টরের দায়িত্বে থাকা একজন সাব ইনস্পেক্টর এবং দু’জন সিভিকও বুড়ি ছুঁয়ে যাওয়ার মতো করে গোলমালের বুথগুলিতে হাজিরা দিয়েছেন।

‘কুইক রেসপন্স টিম’-এর সশস্ত্র বাহিনীও ছুটে বেড়িয়েছে বিভিন্ন ব্লকের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। কিন্তু কোথাও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ। কারণ, গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সে এলাকায় যত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা জরুরি তা বাহিনীর ছিল না বলে জেলা পুলিশ কর্তারাই স্বীকার করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন