পরস্পরের দিকে আঙুল তুলছে শাসক-বিরোধীরা

ভোটের ফল বেরোতেই ফের অশান্তি

ওই পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর বুথে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী অরুণ মালিক। বিজেপির অভিযোগ, বিজয়-মিছিলের নামে অরুণবাবুর নেতৃত্বে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ওই এলাকায় এসে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

উলুবেড়িয়া ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

বিক্ষোভ: চুঁচুড়ায় অবরোধ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। ছবি: তাপস ঘোষ।

পঞ্চায়েত ভোট মিটল। কিন্তু রাজনৈতিক অশান্তি বন্ধ হল না দুই জেলায়। ভোট গণনা শেষ হতেই বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়ার তিনটি এলাকা তেতে ওঠে। শুক্রবার সকালে আবার এক তৃণমূল প্রার্থীর ফ্লেক্স ছেঁড়া ও পুড়ে যাওয়ায় দলীয় নির্দেশের পরোয়া না-করে চুঁচুড়ায় পথ অবরোধ করেন কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ উলুবেড়িয়া তেহট্ট কাঁটাবেড়িয়া-১ নম্বর পঞ্চায়েতের বাণীবন জগদীশপুর গ্রামে মারামারিতে জড়ায় বিজেপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। দু’পক্ষের পাঁচ-ছ’টি বাড়ি ভাঙচুর হয়। এক মহিলা-সহ দু’জন জখম হন। মহিলাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এলাকায় পুলিশ যায়। দু’পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

ওই পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর বুথে জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থী অরুণ মালিক। বিজেপির অভিযোগ, বিজয়-মিছিলের নামে অরুণবাবুর নেতৃত্বে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ওই এলাকায় এসে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায়। মহিলাদের মারধর করে। এক মহিলার হাত ব্লেড দিয়ে চিরে দেওয়া হয়।

Advertisement

অভিযোগ মানেননি অরুণবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটে হার মানতে পারেনি বিজেপি। তাই গণনাকেন্দ্র থেকে ফিরে এসে ওরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে। আমাদের এক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয়।’’ পক্ষান্তরে, বিজেপির অঞ্চল সভাপতি তন্ময় কর্মকারের দাবি, ‘‘আমরা কাউকে মারধর করিনি। ওরাই হামলা করেছে। পড়ে গিয়ে মাথা ফেটেছে এক তৃণমূল কর্মীর। অথচ, বিজেপির নামে দোষ দেওয়া হচ্ছে।’’

ওই রাতেই আবার বাগনানের বাইনানে কংগ্রেসের একটি দলীয় কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করছে। ডোমজুড়ের আন্দুল-মহিয়াড়িতে তৃণমূল কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এলাকার তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি করে আসনে আমাদের প্রার্থী জিতে যাওয়ায় বিজেপি হামলা করে। দুই প্রার্থীর বাড়িতেও হামলা হয়।’’ বিজেপি অস্বীকার করেছে। এক বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘ওরা জোর করে গণনার সময়ে কারচুপি করেছে। আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।’’ অশান্তির জেরে এলাকায় পুলিশ টহল শুরু হয়।

চুঁচুড়ার ঘটনাটি কোদালিয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েতের ময়নাডাঙা অঞ্চলের। এখানকার ১৪৩ নম্বর বুথের তৃণমূল প্রার্থী শুভঙ্কর হালদারের ছবি-সহ ফ্লেক্সটি শুক্রবার সকালে দেখা যায় ছেঁড়া। পুড়েও গিয়েছিল অনেকটা। তা দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তাঁরা দলে দলে চুঁচুড়া স্টেশন রোডে জড়ো হয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে অবরোধ শুরু করেন। বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয় রাস্তা। ফলে, বিপাকে পড়েন বহু ট্রেনযাত্রী এবং পথচারী। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলার পরে পুলিশ দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে অবরোধ-বিরোধী, সেখানে কী ভাবে তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকেরা ওই আন্দোলন করেন, এ প্রশ্নও তোলেন বহু ভুক্তভোগী। এর আগে অবশ্য ভোটের দিন পান্ডুয়াতেও তৃণমূল কর্মীদের জি টি রোড অবরোধ করতে দেখা গিয়েছিল। সমরেশ মজুমদার নামে এক ট্রেনযাত্রী বলেন, ‘‘নির্বাচনের গণনার কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে গিয়ে অবরোধের জেরে দু’টি ট্রেন ধরতে পারলাম না। দিনের শুরুতেই বিপদের সন্মুখীন হতে হল।’’

চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘অবরোধের কথা আমাকে জানানো হয়নি। শাসকদলের সদস্য হয়ে অবরোধ করে আন্দোলন করাটা দলীয় নির্দেশভঙ্গ। অন্যায় কাজ হয়েছে।’’ তৃণমূল প্রার্থীর ফ্লেক্স ছেঁড়া ও পোড়ানোর অভিযোগ সিপিএম মানেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের দাবি, ‘‘আমাদের কেউ দলের নির্দেশ অমান্য করে ও সব করতে যাবে না। শাসকদলের লোকেরা বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন