প্রতীকী ছবি।
অঙ্কের বিচারে হুগলিতে ভোটের আগেই জয়ের দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে শাসকদল। কিন্তু গোঁজপ্রার্থী নিয়ে তাঁদের দুশ্চিন্তা কাটল না প্রচারের শেষবেলাতেও। বিরোধীরা আবার সেই ‘গোঁজ’-এই লাভের আশা করছেন।
মনোনয়ন পর্বেই জেলা পরিষদে এক চতুর্থাংশ আসন আসন পকেটে পুরে ফেলেছে তৃণণূল। ৫০টি আসনের মধ্যে ১৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ৬০৭টি আসনের মধ্যে তারা ২৬১টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী। আরামবাগ মহকুমার পাঁচটি, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া— সাতটি পঞ্চায়েত সমিতি তাদের দখলে। ২০৭টি পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৩১৯২টি। তার মধ্যে ১৩৫৮টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী শাসকদল। ভোটের আগেই দখলে বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত।
বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগ, বহু জায়গায় শাসকের ‘সন্ত্রাস’-এর সামনে এঁটে ওঠা যায়নি। জেলার বাকি অংশে ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলা করেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন প্রার্থীরা। শাসকদল সন্ত্রাসের অভিযোগ মানেনি। তাদের দাবি, বহু আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিরোধীরা। গোটা মনোনয়ন পর্ব দু’পক্ষের এই চাপান-উতোরে সরগরম ছিল। তবে দেখা যাচ্ছে, চণ্ডীতলা-১, ২, শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া, পোলবা-দাদপুর, বলাগড়, সিঙ্গুর, পান্ডুয়া— এই সব জায়গায় বিরোধীদের উপস্থিতি ভালই। তাঁদের দাবি, দাঁতে-দাঁত চেপে লড়াই করবেন। মানুষ ভোট দিতে পারলে, সর্বোপরি পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে শাসকের ‘দাদাগিরি’ রুখে দিলে অনেক জায়গার হিসেবই উল্টে যাবে।
এক নজরে
• গ্রাম পঞ্চায়েত: ৩১৯২টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের দখলে ১৩৮২টি।
• পঞ্চায়েত সমিতি: ৬০৭টির মধ্যে দখলে ২৮২।
• জেলা পরিষদ: ৫০টির মধ্যে দখলে ১৩টি।
সেই হিসেবে বিরোধীদের বড় ভরসা তৃণমূলের ‘গোঁজপ্রার্থী’। তৃণমূল নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বহু জায়গায় ‘নির্দল কাঁটা’ রয়ে গিয়েছে। সিঙ্গুর, হরিপাল, চুঁচুড়া-মগরা, বলাগড়, পান্ডুয়া, পুড়শুড়া, পোলবা-দাদপুরের অনেক জায়গাতেই গোঁজপ্রার্থীরা পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেন। বিরোধীরা মনে করছেন, ‘গোঁজের’ সঙ্গে শাসকদলের প্রার্থীর ভোট কাটাকাটির অঙ্কে আখেরে তাঁরাই লাভবান হবেন। শাসকদলের নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, বহু ক্ষেত্রেই নির্দল প্রার্থীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে।
পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে পান্ডুয়া এবং বলাগড় পঞ্চায়েত সমিতি জিতেছিল সিপিএম। পরে দু’টি সমিতিই দখল করে তৃণমূল। এ বার কী হবে? বিশেষত পান্ডুয়া নিয়ে শাসকদল যে চিন্তিত, দিনকয়েক আগে দলের নেত্রী তথা মন্ত্রী অসীমা মাঝির কথাতেই তা ধরা পড়ে। পান্ডুয়াকে এ বার চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে শাসকদল! ‘গোঁজ’ সামলে এ বার তৃণমূল সেখানে জিতবে, না কি বাজিমাত করবে বিরোধীরা— এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এখানে।
সিঙ্গুর নিয়ে যথারীতি তৃণমূলকে বিঁধছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপি নেতা স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘ওই জমিতে লবডঙ্কা চাষ হচ্ছে।’’ জেলা এসএফআই সম্পাদক অমৃতেন্দু দাস বলছেন, ‘‘সিঙ্গুরে যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার দায় তৃণমূলকে নিতেই হবে।’’ পক্ষান্তরে, জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘সিঙ্গুর-সহ সর্বত্র প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। সেই কারণে মানুষ তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছেন।’’