গোঁজ কাঁটায় অশান্তি, ছ’জন জখম গোঘাটে

মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন শনিবার। তার আগে পর্যন্ত চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চালিয়েছে শাসকদল, বারবার অভিযোগ করেছে বাম ও বিজেপি। সেই অভিযোগই আবার করছেন তৃণমূলের একাংশও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরশুড়া শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৩১
Share:

মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন শনিবার। তার আগে পর্যন্ত চাপ দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা চালিয়েছে শাসকদল, বারবার অভিযোগ করেছে বাম ও বিজেপি। সেই অভিযোগই আবার করছেন তৃণমূলের একাংশও। দলীয় নেতাদের অনেকের অভিযোগ, বহু গোঁজ প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে। সেই কোন্দল না মিটিয়ে পুলিশ দিয়ে বা অন্য কোনও ভাবে ভয় দেখিয়ে গোঁজ প্রার্থী তোলার চেষ্টা করছে দল। তাতে ফল হচ্ছে উল্টো।

Advertisement

শুক্রবারই গোঘাটের সুবীরচক গ্রামে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশের দাবি, জখম হয়েছেন তিন জন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের বুথ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সুবীরচক গ্রামের ৮ নম্বর সংসদে প্রার্থী করেছিল চায়না দিগারকে। একেবারে শুরুতে তিনি মনোনয়ন পেশ করেন। কিন্তু ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রার্থী দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন ব্লক নেতৃত্ব। তাঁরা ওই আসনে চাঁপা পণ্ডিত বাগকে প্রার্থী করেন।

চায়নাদেবী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অভিযোগ, তারই জেরে গত সোম ও মঙ্গলবার রাতে কামারপুকুর পঞ্চায়েতের সুবীরচক গ্রামে বোমাবাজি করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁপা পণ্ডিত বাগের সমর্থনে মিছিল বের করা হয়। অভিযোগ, সে মিছিলে হামলা চালায় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর লোকজন। দু’পক্ষের ৬ জন জখমকে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দু’জনকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

Advertisement

গোঘাট-২ ব্লক সভাপতি তপন মণ্ডলের অভিযোগ, “আমাদের দলের প্রার্থী চাঁপা পণ্ডিত বাগের সমর্থনে মিছিল হচ্ছিল। কয়েকজনকে মারধর করা হয়। প্রতিবাদ করেছেন দলের ছেলেরা।” বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর পক্ষে তৃণমূলের ব্লক নেতা মোহরচাঁদ আহমেদ বলেন, “গ্রামের মানুষের মনোনীত চায়না দিগার পঞ্চায়েত আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। অন্যায়ভাবে তাঁকে টিকিট না দিয়ে অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে। চায়নার জয় নিশ্চিত জেনেই বিধায়ক মানস মজুমদারের পরিকল্পনায় দলের ব্লক সভাপতি তপন মণ্ডলের লোকজন আমাদের মারধর করেছে।’’ অভিযোগ ঘর ভাঙচুর করে লুটপাঠ চালানো হয়েছে। মোহরচাঁদের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ কিছু করেনি। উল্টে সাধারণ মানুষ হামলার প্রতিবাদ করায় তাঁদেরই তাড়া করেছে লাঠি বাগিয়ে।’’ বিধায়ক মানস মজুমদার বলেন, “বিষয়টা পুলিশ দেখছে। আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।”

এই কোন্দলেই জর্জরিত পুরশুড়াও। পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি আসনগুলিতে তৃণমূলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁরা প্রায় কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। ৮টি পঞ্চায়েতের মোট ১৩৮টি আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়েছে ২৩৪টি। পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনে ৪১টি মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূল। এক একটি আসনে ২ থেকে ৫ মনোনয়ন জমা পড়েছে তৃণমূলের নামে। এতগুলির অতিরিক্ত মনোনয়ন জমা পড়েছে অথচ, শুক্রবার পর্যন্ত মাত্র ৯ জন তৃণমূল প্রার্থী মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জয়দেব জানা বলেন, “দল নির্দিষ্ট কাউকে দায়িত্ব না দেওয়াতেই এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। মূল দলে আমরা এক রকম প্রার্থী বাছাই করছি। যুব সংগঠন আবার অন্য তালিকা করছে।”

কোন্দল তত্ত্ব মানতে রাজি হননি পুরশুড়া ব্লক যুব সভাপতি মিসবাহউদ্দিন ওরফে খোকন মল্লিক। তিনি বলেন, “দল যাঁকে টিকিট দেবে তিনিই থাকবেন। বাকিরা সবাই তুলে নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।”

কিন্তু শনিবার এতগুলি মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে কি না, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। পুরশুড়ার অবস্থা এমনই যে, আটটি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে চিন্তিত পুলিশ প্রশাসনও। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করে সবপক্ষকে ডেকে নিজেদের সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন