কাগুজে তারিখ ভুলছে দেওয়াল

শুধু ক্যালেন্ডার নয়। ছাপা হয় না ‘হালখাতা’র খেরো খাতাও। এখন সবাই হিসাব কষেন কম্পিউটারে। ফলে কাগজ শিল্পের এ সব শাখা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ছে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৮
Share:

কাজ: এখনও মিলে যায় কিছু ক্যালেন্ডারের বরাত। নিজস্ব চিত্র

সকাল বেলার আড্ডা আর দোকানে দোকানে বিকেলের ভিড়। সাত রকমের মিষ্টি ভরা প্যাকেট আর নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। কোথাও কালী, কোথাও কৃষ্ণ, কোথাও শিব তো কোথাও আধুনিক কোনও বিদেশি ছবি বা গ্রামের দৃশ্যপট— নীচে লেখা দোকানের নাম। বাড়ি ফিরে দেখা কোন দোকানের কী ছবি, কোনটা ভাল, কোনটা বেশি সুন্দর।

Advertisement

পয়লা বৈশাখের এ ছবি বদলেছে অনেকখানি। আগে ওই ক্যালেন্ডারের জন্য বসে থাকত গোটা পরিবার। এখন আর কদর নেই তার। দেওয়ালে টাঙানোর ক্যালেন্ডার কোনও দোকান থেকে দিলেও তাঁর ঠাঁই হয় আস্তাকুঁড়ে। ‘‘দামী রঙ করা দেওয়ালের সৌন্দর্যের সঙ্গে ক্যালেন্ডারটা ঠিক যায় না’’, সাফ বলেন কলেজ পড়ুয়া এক তরুণী। ক্যালেন্ডার তো রয়েছে তাঁর মোবাইলে রয়েছে। বড়জোর একটা সুন্দর টেবিল ক্যালেন্ডার রাখা যেতে পারে। কেতদুরস্ত্ দোকানগুলি আজকাল তেমনই ক্যালেন্ডার উপহার দেন গ্রাহককে। বাংলার পাঁজি পুঁথি-সহ সুদৃশ্য ছোট্ট ক্যালেন্ডার— সঙ্গে বাংলার ছোপ দেওয়া কড়ি কি লক্ষ্মী ঠাকরুণের পায়ের ছাপ। ওই যথেষ্ট।

কিন্তু এই কেতায় কাজ হারাতে বসেছেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ। একটা সময় ছিল যখন ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ছাপাখানায় দম ফেলার ফুরসত থাকত না। দিন-রাত এক করে কাজ করেও সময়ে ক্যালেন্ডার পৌঁছে দেওয়া যেত না দোকানগুলির হাতে। আর এই বেশি কাজের সুযোগে কিছু বেশি উপার্জনও করে নিতেন শ্রমিকরা। সে সব দিনে গিয়েছে। বললেন, হুগলির এক ছাপাখানার শ্রমিক অজয় দাস। তিনি বলেন, ‘‘এখন যে টুকু ক্যালেন্ডার ছাপা হয় তাতে সময়ের মধ্যেই সরবরাহ করা যায় দোকানে দোকানে। কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছি।’’

Advertisement

শুধু ক্যালেন্ডার নয়। ছাপা হয় না ‘হালখাতা’র খেরো খাতাও। এখন সবাই হিসাব কষেন কম্পিউটারে। ফলে কাগজ শিল্পের এ সব শাখা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ছে। চুঁচুড়ার এক ছাপাখানার তরফে সৌম্যদীপ দে বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগেও বাংলা বছরের শেষের ক’টা মাস দম ফেলার সুযোগ পাওয়া যেত না। বাংলা পঞ্জিকা, ক্যালেন্ডার এবং নতুন খাতা ছাপাতে দিন রাত এক হয়ে যেত।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, আধুনিক প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে ক্রমশ কমছে ছাপাখানার কদর।

বর্ষীয়ান আর এক ছাপাখানা মালিক বলেন, ‘‘নববর্ষের আগে সময়মতো খাতা, ক্যালেন্ডার সরবরাহের জন্য বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক রাখতাম। এখন আর তা লাগে না। কালে কালে ছাপাখানার কাজ বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন