উদ্যোগ: এখানেই তৈরি হচ্ছে গ্যাস। নিজস্ব চিত্র
খুন্তি নাড়তে নাড়তে সাধনা ধোলে বলে উঠলেন, ‘‘বাহ! আঁচের জোর তো বেশ ভালই!’’
পাশে দাঁড়ানো রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মুখে বিজয়ীর হাসি— ‘‘কী বৌদি, সাধে কী আর এত দিন ধরে বলছিলাম, বাড়ির এত গোবর নষ্ট করবেন না!’’
বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চক মুসলমানপাড়ার কেশবচন্দ্র ধোলের বাড়িতে গোবর গ্যাসে রান্নার বন্দোবস্ত হল মঙ্গলবার। ওই বাড়িতে গরু-মোষ আছে। তাদের দুধ দিয়ে পনির তৈরি করা হয়। এ বার থেকে তাদের গোবরও কাজে লাগবে। খাটালের পাশেই ওই প্রকল্প তৈরি করেছেন তাঁরা। খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্র সরকার ন’হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
যে সব বাড়িতে খাটাল রয়েছে, সেখানে গোবর থেকে রান্নার গ্যাস তৈরিতে উৎসাহিত করছে কেন্দ্র সরকার। এ জন্য চালু হয়েছে ‘বায়ো-গ্যাস’ প্রকল্পও। প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করছে ‘খাদি ভিলেজ ইনডাস্ট্রিজ কমিশন’। হুগলির কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি চালু হয়ে গিয়েছে।
‘খাদি ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ কমিশন’-এর হুগলি জেলার এক্সিকিউটিভ সজল চট্টোপাধ্যায় জানান, এই গ্যাসে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই। সাধারণ রান্নার গ্যাসের তুলনায় খরচ প্রায় অর্ধেক। কাঁচা গোবরের দুর্গন্ধ, মশা-মাছির সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। গ্যাস বেরনোর পরে গোবরের যে অংশ পড়ে থাকবে, তা উন্নত মানের সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। সর্বোপরি দূষণ থেকেও মুক্তি মিলবে।
বৈদ্যবাটির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে গোটা পঞ্চাশেক বাড়িতে খাটাল রয়েছে। গরু-মোষের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। গোবরের কারণে নিকাশি ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বহু জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় ‘বৈদ্যবাটি চক ও দীর্ঘাঙ্গ মৌজা কৃষি উন্নয়ন সমিতি’ দীর্ঘদিন ধরেই গোবর-গ্যাস প্রকল্পের চেষ্টা করছিল। কেশববাবুর বাড়িতেই প্রকল্পটি চালু হল।
সমিতির তরফে গৌর পাল, রবীন্দ্রনাথবাবুরা বলেন, ‘‘এই প্রকল্প সফল হলে অন্যেরাও উৎসাহিত হবেন। খাটাল আছে, এমন সব বাড়িতে অথবা সবাই মিলে বড় একটা প্রকল্প করলে সমস্যা মিটবে।’’ লক্ষ্মণ ঘোষ নামে এক চাষি বলেন, ‘‘আমার বাঁশবাগান, চাষজমি গোবরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সবাই গোবর-গ্যাস ব্যবহার করলে খুব ভাল হবে।’’ কেশববাবুর ছেলে সাধন বলেন, ‘‘তেমন হলে আরও বড় করে এই প্রকল্প করা যায় কিনা, দেখব। তা হলে আর গোবর নষ্ট হবে না।’’ প্রকল্পের সুফল নিয়ে মানুষকে বোঝানোর আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বাসুদেব চৌধুরী।