পুনরুজ্জীবন: শনিবােরর কালবৈশাখীর পর ভেঙে পড়া গাছ (বাঁ দিকে) পাশের অন্য একটি গাছে ফের বাসা বেঁধেছে পাখিরা (ডান দিকে)। ছবি: সুব্রত জানা
প্রবল দাবদাহের শেষে খানিকটা স্বস্তিই দিয়েছিল কালবৈশাখী। কিন্তু শনিবার রাতের সেই ঝড়ের পরের সকালে বোঝা গিয়েছিল, স্বস্তির ঝ়ড় ঘরছাড়া করেছে অনেককে। কেড়ে নিয়েছে প্রাণও। উলুবেড়িয়ার পানপুর মোড় আর নিমদিঘি ইএসআই হাসপাতালের চত্বরে তখন শুধু শাবকদের আর্ত চিৎকার! হাত গুটিয়ে থাকতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। বন দফতরে খবর দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরাও হাত লাগিয়েছিলেন উদ্ধারে।
তারপর কেটে গিয়েছে দু-দু’টো দিন। বড় বিপর্যয় সামলে আবার ছন্দে ফিরেছে পাখির দল। গাছের ডালে দিনভর তারা ভিড় করছে। নীচে বসে শোনা যাচ্ছে তাদের কিচিরমিচির ডাকের শব্দ। পানপুর মোড় আর নিমদিঘি ইএসআই হাসপাতাল চত্বরে আছে একাধিক চাকুন্দা গাছ। তাতে ফের বাসা বাঁধছে বক, পানকৌড়ি আর বাচকা পাখির ঝাঁক।
গত ২২ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যাতেও ঝাঁকে ঝাঁকে এইসব পাখির দল বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল শিকারের সন্ধানে। তারপরেই এল সেই কালবৈশাখী। সন্ধ্যা ৭টা থেকে মাত্র এক ঘন্টার ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল পাখির বাসা। ওই এলাকায় তখন শুধু শাবকদের আর্ত চিৎকার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এক এক করে মাটি থেকে তুলে এনেছিলেন শাবকগুলিকে। খেতে দিয়েছিলেন মাছের টুকরো। যে শাবকগুলি বেঁচে ছিল তাদের কারও ডানায় চোট তো কারও আবার পায়ে লেগেছে। রাত জেগে সেইসব আহত শাবকের শুশ্রষা করলেন তাঁরা। রাতেই খবর দিলেন বন দফতরকে। রবিবার সকালে খাঁচা নিয়ে হাজির হলেন বন দফতরের লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের হাত থেকে শাবকগুলিকে নিজেদের হেফাজতে নিলেন তাঁরা। সেই দিন ৫৬টি শাবক উদ্ধার করেন বন দফতরের কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু থেমে থাকেননি। পানপুর মোড়ে বিভিন্ন চায়ের দোকানের চালের খাঁজে, মাঠের ধারে পড়েছিল আরও কিছু শাবক। সেগুলিকে উদ্ধার করা হয়। সোমবার সকালে ফের ৩৯টি শাবককে উদ্ধার করে নিয়ে যায় বন দফতর।
পানপুর মোড়ে চায়ের দোকান আছে সুমিত্রা বাগের। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন ধরে ওরা থাকতে থাকতে কেমন যেন আমাদের পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল। এমন বিপদে ওদের কাছছাড়া করি কী করে!’’ স্থানীয় বাসিন্দা অরুণকুমার সিংহরায় বলেন, ‘‘বাড়িতে কোনও পোষ্য থাকলে যেমন সে বাড়ির একজন হয়ে যায়, ওই পাখিগুলো তেমনই হয়ে গিয়েছে। ওদের আমরা বাঁচাব না তো কে বাঁচাবে বলুন?’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৮৫টি শাবককে গড়চুমুকে মিনি চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে। উলুবেড়িয়ার রেঞ্জ অফিসার উৎপল সরকারের কথায়, ‘‘মানুষ আস্তে আস্তে পাখি, প্রাণী নিয়ে সচেতন হচ্ছেন, উলুবেড়িয়ার এই ঘটনা তার প্রমাণ। বন্যপ্রাণকে বাঁচাতে গেলে মানুষের এভাবেই সহযোগিতা প্রয়োজন।’’