পাথেয়: লাল গোলাপে উদ্বোধন ব্লাডব্যাঙ্কের। নিজস্ব চিত্র
মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে আটপৌঢ়ে প্রৌঢ় বা সদ্য আঠেরোয় পা দেওয়া তরুণ-তরুণী। সকলের হাতেই লাল গোলাপ। প্রত্যেকে সেই ফুল গেঁথে দিলেন নির্দিষ্ট জায়গায়। আর তাতে লেখা ফুটে উঠল ‘শ্রমজীবী ব্লাডব্যাঙ্ক।’
মঙ্গলবার এ ভাবেই উদ্বোধন হল শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের। যা তৈরি হয়েছে গণ উদ্যোগে। আধুনিক এই ব্লাডব্যাঙ্ক হুগলি জেলা-সহ আশপাশের রক্তের সঙ্কট অনেকটাই মেটাবে বলে আশা স্থানীয়দের।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিন ২০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করে ব্লাডব্যাঙ্কে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার পরে ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। দিন তিনেক পরে রিপোর্ট এলে ব্লাডব্যাঙ্ক পুরোদস্তুর চালু হবে। বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির সম্পাদক অনিল সাহা বলেন, ‘‘ব্লাডব্যাঙ্ক সচল রাখতে সাধারণ মানুষ বা ক্লাব-সংগঠনকেই রক্তদান শিবির আয়োজনের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রথম শিবিরটি হবে আগামী ১৪ অক্টোবর শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে।’’
এখানে ব্লাডব্যাঙ্ক হওয়ায় সাধারণ মানুষ কী ভাবে উপকৃত হতে পারেন?
কলকাতার কাছের জেলা হলেও হুগলিতে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের ব্যবস্থা ছিল না। জেলা হাসপাতাল বা তিনটি মহকুমা হাসপাতালে ব্লাডব্যাঙ্ক থাকলেও রক্তের বিশেষ উপাদান দরকার হলে কলকাতায় যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। শ্রমজীবীর ব্লাডব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে রক্ত পৃথকীকরণ (কম্পোনেন্ট সেপারেটর) ব্যবস্থা-সহ। পূর্ণ রক্তের (হোল ব্লাড) পাশাপাশি প্লেটলেট, লোহিত রক্তকণিকা, প্লাজমার মতো রক্তের উপাদানও মিলবে।
হাসপাতালের অন্যতম কর্তা ফণিগোপাল ভট্টাচার্য এবং গৌতম সরকার জানান, সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের দামেই এখান থেকে রক্ত কেনা যাবে। অর্থাৎ, রক্তের নির্দিষ্ট উপাদান আনতে কলকাতায় ছুটতে হবে না। অতিরিক্ত টাকাও গুনতে হবে না। সময়ও বাঁচবে।
পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের বড়বেলুতে দিল্লি রোডের অদূরে এই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেক সময়েই রোগীর পরিজনেরা রক্ত আনতে সমস্যায় পড়েন। ডেঙ্গির মরসুমে প্লেটলেট আনতে কলকাতায় গিয়ে কালঘাম ছুটে যায়। সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কে ওই উপাদান অপ্রতুল হলে বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। আবার, গ্রীষ্মকালে, পুজোর মরসুমে বা সাধারণ নির্বাচনের সময়ে ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তশূন্যতায় ভোগে। হাসপাতালে রক্তের জোগান স্বাভাবিক থাকলে সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে।
শুভ্রজিৎ মৈত্র নামে এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘বছর তিনেক আগে এক সহকর্মীর জন্য প্লেটলেট আনতে কলকাতায় ছুটেছিলাম। এ বার সেই ভোগান্তি ঘুচবে।’’
এ দিন অনুষ্ঠানে ছিলেন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন, বিধায়ক বেচারাম মান্না, প্রবীর ঘোষাল, কোল ইন্ডিয়ার কর্পোরেট স্যোসাল রেসপন্সিবিলিটি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার এ কে পাণ্ডে প্রমুখ। শ্রমজীবী পরিবারের বিভিন্ন শাখার সদস্য, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা এসেছিলেন। সকলের জন্যই ছিল মাছ-ভাতের আয়োজন।