ফের খানাকুলে মৃত্যু দু’জনের

উপড়ে গিয়েছে দোতলা বাড়িও

গত বুধবার রাতে রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে এ তল্লাটের আটটি পাকা বাড়ি-সহ ২০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। দুর্গতেরা সকলেই আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। ব্যতিক্রম শুধু সুকুমারবাবু। রাতটা কাটাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। ভোর হতেই চলে আসছেন ডুবে থাকা বাড়ির সামনে।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

খানাকুল শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০২:১৩
Share:

ডুবন্ত: খানাকুলের ধান্যগোড়িতে। ছবি: মোহন দাস

বন্যার জলে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে দোতলা পাকা বাড়িটা।

Advertisement

চার দিন ধরে সেই বাড়ির সামনেই বেশির ভাগ সময় কাটছে সুকুমার বেরার। চোখে জল। ‘‘কুড়ি বছর ধরে তিল তিল করে জমানো টাকায় বাড়িটা করেছিলাম কয়েক বছর আগে। গত বুধবার বন্যায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভেঙে পড়ে গেল!’’— এখনও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না সুকুমারবাবু।

খানাকুল-২ ব্লকের ধান্যগড়ি পঞ্চায়েতের ঘোড়াদহ গ্রামের বাসিন্দা সুকুমারবাবুর একার বাড়িরই ওই দশা নয়। রবিবার ওই এলাকায় ঘুরে দেখা গেল এমন আরও কিছু ছবি। কোনও বাড়িটা বিশ্বনাথ বেরার। কোনওটা প্রদ্যুৎ বেরার, কোনওটা নিতাই সামন্তের। সকলেই কৃষিজীবী। সকলেই কাঁদছেন। বন্যার জল নামলে কী ভাবে আবার বাড়ি তৈরি হবে, এই ভেবে!

Advertisement

গত বুধবার রাতে রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে এ তল্লাটের আটটি পাকা বাড়ি-সহ ২০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। দুর্গতেরা সকলেই আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। ব্যতিক্রম শুধু সুকুমারবাবু। রাতটা কাটাচ্ছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। ভোর হতেই চলে আসছেন ডুবে থাকা বাড়ির সামনে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এই এলাকা যে বন্যাপ্রবণ সেটা জেনেই মজবুত ভাবে বাড়িটা বানিয়েছিলাম। তবু রক্ষা পেল না।’’

আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মধ্যে খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকার মোট ৬৮টি গ্রাম এখনও বিচ্ছিন্ন। জল নামেনি। মাড়োখানা, চিংড়া, শাবলসিংহপুর, ধান্যগোড়ির মতো পঞ্চায়েতগুলি এখনও ১০-১৫ ফুট জলের তলায়। প্রয়োজনের তুলনায় এখানে নৌকাও কম। ফলে, যাতায়াতে নাকাল হচ্ছেন মানুষ। রবিবার সকালে রাজহাটি ভীমতলা বাজার থেকে ঘোড়াদহ যেতে ছিল মাত্র দু’টি নৌকা। যাত্রীর সংখ্যা ছিল শ’খানেক। নৌকায় ওঠা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মারপিট হয়। শেষে এক তৃণমূল নেতা আর একটি নৌকার ব্যবস্থা করে পরিস্থিতি সামালান।

বিচ্ছিন্ন রয়েছে খানাকুল-১ ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। আরামবাগের বহু এলাকাও এখনও বিপর্যস্ত। পুরশুড়ার ৪০টি মৌজাও জলমগ্ন। রবিবার সকালে পুরশুড়ার মারকুণ্ডা এলাকায় বর্ধমানের সদরঘাট থেকে দামোদরে ভেসে আসা তপতী চৌধুরী নামে এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়। বাড়ির লোকজন এসে তাঁকে নিয়ে যান। তপতীদেবী ওই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান সুমিত্রা পাত্রকে জানিয়েছেন, শনিবার বাড়ির কাছে দামোদরে পা ধুতে গিয়ে পড়ে ভেসে যান। সারারাত ভেসে ছিলেন।’’ জল নেমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে গোঘাটের বাসিন্দারা।

বন্যা পরিস্থিতির কারণে মহকুমায় প্রাণহানি চলছেই। রবিবার সকালে খানাকুল-১ ব্লকের রামমোহন-২ পঞ্চায়েত এলাকার আটঘরা মেলাতলায় খাঁদু বাগ (৪০) নামে এক যুবক জলে তলিয়ে যান। স্থানীয় মানুষ তাঁর দেহ উদ্ধার করে। ওই ব্লকেরই ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের পূর্ব ঠাকুরানিচক গ্রামে বন্যায় ছেঁড়া বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে আসায় মৃত্যু হয় সঞ্জয় পাল (২৬) নামে এক যুবকের। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ।

ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, ত্রাণের অভাব নেই। মহকুমা ত্রাণ আধিকারিক সৌমেন দাস জানান, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।a

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন