টোটো-চালকদের সঙ্গে অন্য যাত্রিবাহী গাড়ি-চালকদের গোলমাল থামছেই না হুগলিতে।
এ বার ভদ্রেশ্বরে এক বাস-চালককে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক টোটোচালকের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ফের জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে কোনও রুটের বাস চলল না। বন্ধ রইল অটো ও ট্রেকার চলাচলও। হয়রান হলেন সাধারণ যাত্রীরা। তীব্র গরমে গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হলেন অনেকে।
জেলা বাস-মালিক সংগঠন সূত্রের দাবি, রবিবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ চুঁচুড়া থেকে বাগখালগামী ২ নম্বর রুটের একটি বাস জি টি রোডের ভদ্রেশ্বর বাবুঘাট স্টপে দাঁড়ায়। তখনই একটি টোটো বাসটির সামনে এসে দাঁড়ায়। আরও একটি টোটো সেখানে দাঁড়িয়েছিল। বাসচালক অরুণ বিশ্বাস জানান, দু’টি টোটো সামনে দাঁড়িয়ে পড়ায় বাস নিয়ে এগোতে সমস্যা হচ্ছিল। একটি টোটোকে তিনি সরে দাঁড়াতে বলেন। তখন বছর পঁচিশের ওই টোটোচালক রিভলভার উঁচিয়ে তাঁকে শাসানি দেয়। অরুণবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছেলেটা আমাকে বলছিল ‘বাস তুলে দেব। শুধু টোটো চলবে।’ ভয় পেয়ে কোনও রকমে পাশ কাটিয়ে চলে যাই।’’
সোমবার সকালে ওই বাসচালক সতীর্থদের ঘটনার কথা জানান। বাস-মালিকদেরও জানানো হয়। এর পরেই নিরাপত্তার দাবিতে বাসের কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। টোটোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত বাস চালাবেন না বলে তাঁরা জানিয়ে দেন। চুঁচুড়া থেকে চুঁচুড়া স্টেশন, রিষড়া, পাণ্ডুয়া, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকটি রুটের অটো, ট্রেকারও বন্ধ হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রথম দিন সড়ক পথে গাড়ি না মেলায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথে বেরনো মানুষকে। বাস মালিকদের তরফে ভদ্রেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা (আরটিও) সৈকত দাস বলেন, ‘‘ওই অভিযোগ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা বাস মালিক সংগঠনের কর্তা তথা রিষড়া-চুঁচুড়া ২ নম্বর বাসের মালিক দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘কোনও কোনও জায়গায় টোটোচালকেরা অত্যন্ত খারাপ আচরণ করছেন। অকারণে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। ইচ্ছে করে বাসকে জায়গা ছাড়ছে না। এতে ঝগড়া হচ্ছে। দিন কয়েক আগে পলতাঘাটে আমাদের এক শ্রমিককে হুমকি দেওয়া হয়। বৈদ্যবাটি রেলগেটের কাছেও একই ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করাতেই সমস্যা জিইয়ে থাকছে।’’
বাস বা অটো চালকদের বক্তব্য, সরকারি নির্দেশিকা মেনে জিটি রোডে এবং অন্য গাড়ির রুটে টোটো উঠতে না দিলেই সমস্যার সমাধান হবে অনেকটা। তার পরিবর্তে অলিগলিতে ঢুকে যাত্রীকে বাড়ির সামনেও নামিয়ে দিয়ে আসতে পারে ব্যাটারিচালিত এই গাড়ি। চন্দননগর পুর-কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই জিটি রোডে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেখানে সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। কিন্তু অন্যান্য জায়গায় পুরসভাগুলি এখনও এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করেনি।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, টোটো বেরনোয় যাত্রীদের সুবিধা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু লাগামহীন ভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টোটো বেরিয়ে যাওয়ায় পরিবহণ ব্যবস্থা কার্যত তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে টোটোর রুট ঠিক করতে এবং তা নিয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হুগলি-চুঁচুড়া, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানির মতো কয়েকটি পুরসভা সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সদর এবং চন্দননগরের মহকুমাশাসক টোটোর সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন।
আরটিও বলেন, ‘‘কিছুটা দেরি হয়েছে ঠিকই। আশা করছি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই টোটোর রুট নিয়ে সমস্যা মিটে যাবে।’’
বাস বা অটো-চালকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতাদের মদতে রাস্তায় টোটো নেমেছে। তাঁদের মর্জিতে যে কোনও রাস্তায় সেগুলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাঁদের চটিয়ে সবক’টি পুরসভাই টোটো চলাচলে লাগাম পড়াতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।