শরৎ ভিটের ‘রেপ্লিকা’ গড়ে পর্যটন কেন্দ্রের উদ্যোগ

শরৎচন্দ্রের বাড়ির অনুকরণে একটি নতুন ভবন (রেপ্লিকা) তৈরি করে সামতাবেড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী হল হাওড়া জেলা পরিষদ।

Advertisement

নুরুল আবসার

বাগনান শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

স্মৃতিধন্য: শরৎচন্দ্রের শেষ জীবনের কয়েকটা বছর কেটেছিল সামতাবেড়ের এই বাড়িতেই। ছবি: সুব্রত জানা

শরৎচন্দ্রের বাড়ির অনুকরণে একটি নতুন ভবন (রেপ্লিকা) তৈরি করে সামতাবেড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়তে উদ্যোগী হল হাওড়া জেলা পরিষদ।

Advertisement

শরৎবাবু মারা যান ১৯৩৮ সালে। শেষ জীবনের অনেকগুলি বছর তিনি কাটিয়েছিলেন বাগনানের সামতাবেড়ে নিজের দোতলা বাড়িতে। এই বাড়িতে বহু বিপ্লবী, লেখক এবং গুণিজন এসেছেন কথাশিল্পীর সঙ্গে দেখা করতে। এখানেই তিনি বিপ্রদাস, অরক্ষণীয়া, শ্রীকান্ত-র (চতুর্থ পর্ব) মতো উপন্যাস লেখেন। ২০০৯ সাল নাগাদও ওই বাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির চেষ্টা করেছিল জেলা পরিষদ। কিন্তু তা সফল হয়নি। তাই মাসখানেক আগে জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় ‘রেপ্লিকা’ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। জেলা পরিষদের অনুমোদিত নির্মাণ সংস্থাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরিরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিষদ জানিয়েছে, নতুন ভবনে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হবে। আনা হবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কথাশিল্পীর স্মৃতি বিজড়িত জিনিসও। শরৎবাবুর বিভিন্ন উপন্যাস, গল্পের চরিত্রের আদলে তৈরি হবে মডেল। রাতে থাকার ব্যবস্থাও থাকবে নতুন ভবনে। বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন বলেন, ‘‘নতুন প্রকল্পে জমির অভাব হবে না। মূল ভবনটির পাশে অনেক খাসজমি পড়ে আছে। সেখানেই প্রকল্পটি হবে। কিছু বাড়তি জমি প্রয়োজন হবে। স্থানীয় বাসিন্দারা কথাশিল্পীর সম্মান রক্ষায় তা দান করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’’ জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘কথাশিল্পীর স্মৃতিধন্য সামতাবেড়কে আমরা রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে দিতে বদ্ধপরিকর।’’

Advertisement

আগের প্রকল্পটি ভেস্তে গেল কেন?

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের প্রকল্পেও ওই বাড়িতে পর্যটকদের রাতে থাকার ব্যবস্থা, কথাশিল্পীর লেখা বিভিন্ন উপন্যাস ও গল্পের চরিত্রদের মডেল হিসেবে রাখার কথা ছিল। কেন্দ্র সরকার টাকাও বরাদ্দ করে। শরৎবাবুর ভাইয়ের নাতি এখন ওই বাড়ি ও সংলগ্ন জমির মালিক। প্রকল্পটি করতে হলে বাড়ি ও জমি সরকারকে অধিগ্রহণ করতে হতো। কিন্তু বর্তমান মালিক রাজি হননি। তাই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। শরৎবাবুর ছোট ভাই প্রকাশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম দাদু (শরৎচন্দ্র) যে পরিবেশে লেখালেখি করেছেন, সেটি বজায় রেখেই এখানে পর্যটন কেন্দ্র হোক। কিন্তু সরকার যে ভাবে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়তে চেয়েছিল তাতে ওই পরিবেশ বজায় থাকত না বলে আমাদের আশঙ্কা। এই মতভেদের কারণেই জমি হস্তান্তর করতে আমরা রাজি হইনি।’’

শরৎবাবু দীর্ঘদিন হাওড়ার বাজে শিবপুরে ভাড়া থাকতেন। সামতাবেড়ে তাঁর দিদি অনিলাদেবীর বিয়ে হয়েছিল। সেই সূত্রে এই গ্রামে যাতায়াত ছিল শরৎবাবুর। রূপনারায়ণের তীরে গ্রামটি তাঁর পছন্দ হয়। জমি কিনে ১৯২৩ সাল নাগাদ তৎকালীন নামী নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে নকশা বানিয়ে শরৎবাবু বারান্দাঘেরা দোতলা মাটির বাড়ির তৈরি করানো শুরু করেন। গৃহপ্রবেশ করেন ১৯২৬ সালে। এলাকার গরিব মানুষদের বিপদে-আপদে তিনি পাশে থাকেন। তাঁদের সমস্যা সমাধানে সরকারি মহলে তদ্বির করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা নিতেন। ১৯৭৮ সালের বন্যায় বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন তারপরে বাড়িটি সংস্কার করে। এখনও ছুটির দিনে বহু পর্যটক ভিড় জমান ওই বাড়িতে।

জেলা পরিষদের কর্তারা মনে করছেন, আগের প্রকল্পটি হলে রাজ্যের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্রের তকমা পেতে পারত সামতাবেড়। বিধায়ক বলেন, ‘‘শরৎবাবুর পরিবার জমি দেননি, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। নতুন পরিকল্পনায় কথাশিল্পীর স্মৃতিকে রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন