চুঁচুড়া-ধর্মতলা রুটের ‘বাংলাশ্রী’র যাত্রা বন্ধ

ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের দু’টি রুটেও ওই বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

তাপস ঘোষ

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪১
Share:

শূন্য: দাঁড়িয়ে রয়েছে ফাঁকা বাস। —নিজস্ব চিত্র।

ছিল দু’টি। হল একটি। সেটিও ধুঁকছে।

Advertisement

উদ্বোধনের পরে এক মাসও কাটল না, যাত্রীর অভাবে শনিবার থেকে চুঁচুড়া-ধর্মতলা রুটের একটি ‘বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস’ বন্ধ হয়ে গেল। এতদিনে মাত্র পাঁচ জন যাত্রী পেয়েছেন বলে চালক-কন্ডাক্টররা জানিয়েছেন। অন্যটি বাসটিও ফাঁকাই দৌড়চ্ছে। দিঘা পর্যন্ত রুট বাড়ানো হয়েছে। তবু যাত্রী হচ্ছে না। সেটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে মানছেন পরিবহণ দফতরের কর্মীদেরই একাংশ। দু’টি বাস মিলিয়ে এ পর্যন্ত যাত্রী হয়েছে ১০ জন। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের দু’টি রুটেও ওই বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

চুঁচুড়া-ধর্মতলা রুটে ‘বাংলাশ্রী’র ভাড়া ১২৫ টাকা। অর্থাৎ, বন্ধ হয়ে যাওয়া বাসটি থেকে সরকারের এ পর্যন্ত মোট আয় হয়েছে মাত্র ৬২৫ টাকা। সেখানে প্রতিদিন খরচ হয়েছে অন্তত ৭৪০০ টাকা। কারণ, চালক-কন্ডাক্টররা জানিয়েছেন, ওই ৭৫ কিলোমিটার রুটে যাতায়াতের জ্বালানি খরচ অন্তত ৬৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে টোল-ট্যাক্স, তাঁদের খাবারের খরচ। সব মিলিয়ে আরও প্রায় ৯০০ টাকা। এর বাইরে রয়েছে কর্মীদের মাইনে, বাসের জন্য বিনিয়োগ, রক্ষণাবেক্ষণ-সহ আরও নানা খরচ।

Advertisement

‘‘এ যেন ঢাকের দায়ে মনসা বিকোচ্ছে!’’— মানছেন পরিবহণ দফতরের এক কর্মী। অবশ্য ‘বাংলাশ্রী’র হাল ফেরাতে ভাড়া কমানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে ওই দফতরে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস বলেন, ‘‘কম সময়ে কী ভাবে ওই রুটে বাস চালানো যায়, সে ব্যাপারে ভাবনা চলছে। মাঝপথে যাতে যাত্রী তোলা যায়, সে প্রস্তাবও পাঠাব।’’

গত ১৯ জুলাই নবান্ন থেকে ‘বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস’-এর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার সঙ্গে জেলা সদরকে জুড়তে এই ‘নন-স্টপ’ এসি বাস পরিষেবা শুরু করে পরিবহণ দফতর। ২০টি রুটে এই পরিষেবা শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ রুটের বাসেই যাত্রী সংখ্যার অবস্থা তথৈবচ।

শুরুতে চুঁচুড়া থেকে দিনে দু’টি করে ‘বাংলাশ্রী এক্সপ্রেস’ ছাড়ছিল। একটি সকাল ৮টায়। অন্যটি দুপুর ২টোয়। বন্ধ হয়েছে সকালের বাসটিই। দুপুরের বাসটি বিকেলে ধর্মতলা পৌঁছে সন্ধ্যায় পাড়ি দিচ্ছে দিঘা। পৌঁছচ্ছে রাত ১০-১১টা নাগাদ। তাতেও যাত্রী হচ্ছে না বলে আক্ষেপ চালক তরুণ চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, ‘‘চুঁচুড়া-কলকাতা রুটে ফাঁকা বাস চালানোর অভিজ্ঞতা, আক্ষেপ কর্মজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’’

কিছুদিন ওই রুটে বাস চালানোর পরেই কর্মীরা জানিয়েছিলেন, যদি মাঝপথে যাত্রী তোলা যেত, রুটের কিছু পরিবর্তন আনা হত এবং ভাড়া কিছুটা কমত, তা হলেও হয়তো লাভের মুখ দেখা যেত। কিন্তু তা হয়নি। ফলে, সরকার লাভের মুখও দেখেনি। একটি বাসের কন্ডাক্টর চন্দন পাল বলেন, ‘‘সরকারকে প্রতিদিন শুধু খরচের হিসেব দিচ্ছি। আয়ের হিসেব দিতে না-পেরে নিজেদের অপরাধী মনে হচ্ছে।’’

শহর থেকে একটি বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হেলদোলই নেই চুঁচুড়াবাসীর। অনেকেই বলছেন, ওই বাস পরিষেবায় পরিকল্পনার ভুল রয়েছে। বাসের জন্য সরকার যে বিনিয়োগ করেছে, সেই টাকায় শহরের পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি করা যেত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন