বেহাল: ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ছোট্ট একটা কাউন্টার। তার সামনে দাঁড়িয়ে রোগী নিজের সমস্যার কথা বলছেন। সব শুনে হাত বাড়িয়ে ওষুধ এগিয়ে দিচ্ছেন নার্স। বিনা-চিকিৎসকে এভাবেই দিনের পর দিন চলছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মাজু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া অন্য যে গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে, সেটি প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। উপায় না থাকায় ভরসা রাখতে হয় এই খুঁড়িয়ে চলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরই।
বছর কুড়ি আগের কথা। মাজু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু ছিল ৮ শয্যার অন্তর্বিভাগ। এক বছর আগে চিকিৎসকের অভাবে সেই অন্তর্বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ভরসা ছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে। আর গত ৯ মাস যাবত শেষ ভরসা সেই বহির্বিভাগে নেই কোনও চিকিৎসক। ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে ঠিকমতো পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাজু পঞ্চায়েতের চংঘুরালি, মাঠঘুরালি, যাদববাটি, সন্তোষবাটি, উত্তর মাজু-র মতো অন্তত ২০টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার পরিবার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। অন্তর্বিভিাগ চালু থাকার সময়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিখরচায় সন্তান প্রসবের সুযোগ পেতেন গ্রামের দরিদ্র পরিবারের প্রসূতিরা। সকাল ৯টা থেকে চিকিৎসক বসতেন । মিলত বিনা মূল্যের ওষুধ। আর রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হত গোহালপোতা গ্রামীণ হাসপাতালে।
কিন্তু গত এক বছরে ছবিটা অনেকটা বদলে গিয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ। তারপর সেই একই কারণে বন্ধ হয় বহির্বিভাগও। এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভরসা একজন নার্স, ফার্মাসিস্ট এবং দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। আগের মতো এখনও সকাল ৯টায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলে। তবে আগের মতো আর প্রসূতিরা আর ভর্তি হন না। শুধু ওষুধ দেওয়া হয় জ্বর, সর্দি বা সাধারণ পেটের অসুখের। যাদববাটি গ্রামের আশিস রক্ষিত, উত্তর মাজু গ্রামের বিশ্বনাথ সিংহের অভিযোগ, ‘‘এখন মুদিখানার দোকানেও এইসব ওষুধ দেওয়া হয়। নার্সের লিখে দেওয়া ওই ওষুধ কেন খাব?’’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সই জানালেন, আগে দৈনিক তিন রোগী ভিড় করতেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আর এখন মেরেকেটে ৫০জন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক বহাল করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বহুবার দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকের বড়ই অভাব। স্বাস্থ্য ভবনের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসক না আসেন আমারও হাত পা বাঁধা।’’