৫১ লক্ষের দোকান বিক্রি ৪৩ লক্ষে ! প্রশ্নে তারকেশ্বর পুরসভা

একজন জমি-বাড়ির দালাল স্বপন ক্ষেত্রপাল। আর এক জন স্বপনবাবুরই কর্মচারী এবং তৃতীয় জন শাসকদলের একটি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

এ যেন লোকসানের জন্যই প্রকল্প!

Advertisement

নিজস্ব জমিতে ১৪টি দোকানঘর তৈরি করেছে তারকেশ্বর পুরসভা। খরচ হয়েছে ৫১ লক্ষ টাকা। আর নিলামে সেই সব দোকানঘর বিক্রি হল ৪৩ লক্ষ টাকায়! যার বেশির ভাগটাই কিনলেন এক জমিবাড়ির দালাল! নিট ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতির এই প্রকল্প কেন বানানো হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

উন্নয়নের প্রশ্নে তারকেশ্বর পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ কম নয়। রয়েছে পুরবোর্ডে পুরপ্রধান-উপপুরপ্রধান দ্বন্দ্বও। তার পরে এই ‘নিলাম-কাণ্ড’ সামনে আসায় তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশই অস্বস্তিতে পড়েছেন। নিলামের পদ্ধতি নিয়ে জেলা এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয়েরা।

Advertisement

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দোকানঘরগুলি তৈরি হয়েছে তারকেশ্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পুরভবনে নিলাম হয়। তার আগে নিলামে ব্যবসায়ীদের সামিল হওয়ার জন্য প্রথামাফিক একটি স্থানীয় এবং একটি সর্বভারতীয় কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। নিলামের দিন বিধি অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকা করে জমা দিতে বলা হয় অংশগ্রহণকারীদের। কিন্তু নিলামের দিন দেখা যায়, সেখানে সামিল হয়েছেন মাত্র তিন জন!

কারা সামিল হয়েছিলেন নিলামে?

একজন জমি-বাড়ির দালাল স্বপন ক্ষেত্রপাল। আর এক জন স্বপনবাবুরই কর্মচারী এবং তৃতীয় জন শাসকদলের একটি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। পুরসভারই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ দোকান গড়ে ৩ লক্ষ টাকার কিছু বেশি হিসেবে কেনা হয়েছে। কিন্তু তা বিধিসম্মত ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ কাউন্সিলরদের একাংশের। স্বপনবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘নিয়মমাফিকই পুরসভার থেকে দোকানঘর কিনেছি। আমরা তিন জন ছাড়া ওখানে আর কেউ নিলামে সামিল হননি।’’

নিলাম-পর্ব মিটে যাওয়ার পরেই কাউন্সিলরদের একাংশের পাশাপাশি শাসকদলের কয়েকজনও পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, গোটা ঘটনার পিছনে পুরসভার একটি চক্র কাজ করছে। নিজেদের লোককে দোকানঘর পাইয়ে দেওয়ার এ এক কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। কম করে ওখানকার প্রতিটি দোকানের দাম ১০-১২ লক্ষ টাকা হতো।

এক কাউন্সিলর তো বলেই দিলেন, ‘‘এ শহরের ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই জানতেন নিলামের নাম প্রহসন হবে। পুরবোর্ডের মাথারা নিজেদের পেটোয়া লোককে দোকানঘর দেবেন। তাই অন্য ব্যবসায়ীরা নিলামে আসেননি।’’

কী বলছেন পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত? তাঁর দাবি, ‘‘কে কী মনগড়া অভিযোগ তুলছেন জানি না। যা হয়েছে নিয়ম মেনে হয়েছে।’’ উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এক কাউন্সিলরের আক্ষেপ, ‘‘কোনও অভিযোগ উঠলে নিজেদের বোঝাপড়ায় দুই মাথা এক হয়ে যান। মাঝখান থেকে আমরা সন্দেহের তালিকায় চলে যাই। আমরা এখন রীতিমতো অসহায়।’’

তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নিলাম নিয়ে তদন্ত শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন