‘হুমকি’ উড়িয়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙল পুরসভা

কোনও ‘হুমকি’র কাছেই যে তারা দমবার পাত্র নয়, এ বার কার্যত সেটাই প্রমাণ করল হাওড়া পুরসভা। বেলুড়ের যে ‘অবৈধ’ বাড়ির কাজ বন্ধ করা নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ এবং‌ হাওড়া পুরসভার কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে গোলমাল দেখা দিয়েছিল, সেই বাড়ির দু’টি তল বেআইনি ঘোষণা করে ভেঙে দিল পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৬
Share:

ভাঙা হচ্ছে সেই বাড়ির অংশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

কোনও ‘হুমকি’র কাছেই যে তারা দমবার পাত্র নয়, এ বার কার্যত সেটাই প্রমাণ করল হাওড়া পুরসভা। বেলুড়ের যে ‘অবৈধ’ বাড়ির কাজ বন্ধ করা নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ এবং‌ হাওড়া পুরসভার কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে গোলমাল দেখা দিয়েছিল, সেই বাড়ির দু’টি তল বেআইনি ঘোষণা করে ভেঙে দিল পুরসভা। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে পুর-কমিশনার জানিয়ে দিলেন, বালি, বেলুড়, লিলুয়ায় আরও কয়েকশো বেআইনি বাড়ি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলি ভাঙার কাজ পুজোর আগেই শুরু হবে। হুমকির মুখে পিছিয়ে আসা হবে না।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার বালির উন্নয়নের খসড়া পরিকল্পনা করার সময়ে ১৪/১, মুখার্জি লেনের একটি ছ’তলা নির্মীয়মাণ বাড়ির কাজ ‘বেআইনি’ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেন বালির পুরপ্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত নীলাঞ্জনবাবু। এর পরেই তৃণমূল বিধায়কের ফোন আসে তাঁর কাছে। নীলাঞ্জনবাবু জানান, সুলতান সিংহ তাঁকে কার্যত হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁকে না জানিয়ে বালিতে ঢোকা যাবে না। এমনকী, তাঁর অনুমতি ছাড়া বালিতে উন্নয়নের কাজও করা যাবে না।

ওই ফোন ঘিরে হাওড়া পুরসভায় হুলুস্থূল পড়ে যায়। শেষে বিধায়ক নিজেই পুরভবনে এসে বিতর্কে ইতি টানার চেষ্টা করেন। তখনকার মতো সমস্যা মিটলেও পুরকর্তারা ওই বাড়িটির বেআইনি অংশ ভাঙার জন্য ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেন। এর পরেই বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ পুর কমিশনার নিজে বাড়ি ভাঙার লোকজন ও বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে হাজির হন মুখার্জি পাড়ায়। কার্যত বিনা বাধায় বাড়িটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তল ভেঙে দেন পুরকর্মীরা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর কমিশনার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরে বাড়িটির প্রোমোটার যে কাগজপত্র দেখিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায় বাড়িটি চারতলা পর্যন্ত তৈরির অনুমোদন রয়েছে। পাশাপাশি, বাড়িটির বেআইনি অংশের নির্মাণ যাতে প্রোমোটারই ভেঙে দেন (সেল্ফ ডেমোলিশন), সে জন্য বালি পুরসভা আগেই নোটিস দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নির্মাণকাজ চলার সময়ে তা পুরসভার নজর এড়িয়ে যায়। পুর-আইন অনুযায়ী, যে বাড়ির বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলার জন্য প্রোমোটারকে নোটিস দিয়েছিল বালি পুরসভা, তিনি সেটা না ভাঙলে পুরসভা নিজেই তা ভেঙে দিতে পারবে। সে কারণে হাওড়া পুরসভা ওই বাড়িটির বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই কথা জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং হাওড়ার পুলিশ কমিশনায় দেবেন্দ্রপ্রসাদ সিংহকে।

এ দিন পুর-কমিশনার বলেন, ‘‘ওই বাড়িটির বেআইনি অংশ ভেঙে দিয়ে হাওড়া পুরসভার তরফে এই বার্তাই দেওয়া হল, গত ৩৬ বছর ধরে বালির একটিও বেআইনি বাড়িতে হাতুড়ির ঘা না পড়লেও এ বার থেকে পড়বে। হুমকি দিয়ে কাজ হবে না।’’ নীলাঞ্জনবাবু আরও বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই বালি, বেলুড় ও লিলুয়া এলাকায় কয়েকশো বেআইনি বাড়ি, শপিং মল এবং বহুতল চিহ্নিত করেছি। পুজোর আগেই সেগুলির বেআইনি অংশ ভাঙার কাজ শুরু হবে।’’

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়া ও বালি— যেখানে যা করার, তা করতে হবে সরকারি আইন মেনেই। তা না হলে ভেঙে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন