Coronavirus

শয্যাসংখ্যা কমানো হচ্ছে কোভিড হাসপাতালে, প্রশ্ন

হুগলির শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল ওই নির্দেশ পেয়েছে। কিন্তু কিছু শয্যা সরকার ছেড়ে দিলেই সেখানে নন-কোভিড চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব নয় বলে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

করোনা অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা কমছে। কমছে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তাও। এই কারণ দেখিয়ে কোভিড চিকিৎসার জন্য নেওয়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সরকারের যুক্তি, কিছু শয্যা ছেড়ে দিলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সেখানে নিজেদের বন্ধ রাখা স্বাভাবিক পরিষেবা চালু করতে পারবে। জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে অবশ্য তিন দিনের নোটিসে ওই সব শয্যা আবার কোভিড চিকিৎসার জন্য নেওয়ার কথাও নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।

Advertisement

হুগলির শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল ওই নির্দেশ পেয়েছে। কিন্তু কিছু শয্যা সরকার ছেড়ে দিলেই সেখানে নন-কোভিড চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব নয় বলে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। এ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা।

শ্রমজীবী হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় এপ্রিল মাসের গোড়ায়। মোট শয্যা ১০০টি। তার মধ্যে সাধারণ শয্যা ৮০টি। বাকি ২০টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৮০০ রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন। মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্যুতির কথা শোনা গেলেও কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে এই হাসপাতাল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এই হাসপাতালের ১০টি সিসিইউ এবং ৩০টি সাধারণ অর্থাৎ মোট ৪০টি শয্যা সরকার ছেড়ে দিতে চায়। ওই নির্দেশিকার কথা জেনে শ্রমজীবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, একটি তলের একই ঘরে আইসিইউ শয্যাগুলি রয়েছে। অপর একটি তলের চারটি ঘরে সাধারণ বিভাগ। ফলে, সরকার কিছু শয্যা ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও সেখানে নন-কোভিড রোগী ভর্তি করা সম্ভব নয়। হাসপাতালের এক সদস্যের কথায়, ‘‘কোভিড রোগীর সঙ্গে একই ঘরে সিসিইউ-তে কোনও নন-কোভিড রোগী ভর্তি করা সম্ভব? ঘর আলাদা করা হলেও একই তলে সাধারণ শয্যার ক্ষেত্রেও নন-কোভিড রোগী ভর্তি সম্ভব নয়। কোনও রোগী এ ভাবে ভর্তি হ‌তেও কী চাইবেন‌?’’

হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘আমরা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছি, হয় যেমন চলছে তেমন চলুক। না হলে পুরো হাসপাতালই ছেড়ে দেওয়া হোক।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের গৃহ-‌নিভৃতবাসে থাকার প্রবণতা বেড়েছে। তাই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা কমছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালের তরফে মৌখিক ভাবে কিছু সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। ওঁরা লিখিত ভাবে তা জানাবেন বলেছেন। সে ক্ষেত্রে ওই বক্তব্য স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেব আমরা।’’

শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমজীবীতে প্রায় ৪৫ জন কোভিড রোগী ভর্তি ছিলেন। তার মধ্যে সিসিইউ-তে ছিলেন ১৮‌ জন। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, হুগলিতে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এমন নয়। পরিসংখ্যান বলছে, পয়লা ডিসেম্বর এই জেলায় অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫৯ জনে নেমে গিয়েছিল। তার পর থেকে ফের তা কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। শুক্রবার দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। ওই দিন অ্যাক্টিভ আক্রান্ত ছিলেন ১২৫১ জন, যা তার আগের দিনের তুলনায় ৫৮ জন বেশি। শুক্রবারের বুলেটিনে মৃতের সংখ্যা তিন। এই পরিস্থিতিতে আইসিইউ শয্যা কমানো কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন