প্রতীকী ছবি।
পথ-কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। রয়েছে হনুমানের উপদ্রবও। কিন্তু আক্রান্তদের জন্য কোথায় প্রতিষেধক?
মাসতিনেক ধরে হাওড়া গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিলছে না এআরভি (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন)। কুকুর বা হনুমান কামড়ালে ওই টিকাই নিতে হয় আক্রান্তদের। গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে তা মিললেও পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। ওই দু’জায়গায় এআরভি পেতে লম্বা লাইনও পড়ছে প্রায়ই। কিন্তু জরুরি এই প্রতিষেধক সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত মিলছে না কেন?
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস জানিয়েছেন, সমস্যাটি রাজ্য জুড়েই চলছে। কারণ, স্বাস্থ্য দফতর মাত্র একটি সংস্থার কাছ থেকে এআরভি কেনে। কিন্তু গত কয়েক মাস হল সংস্থাটি জোগান দিতে পারছে না। সেই কারণেই প্রয়োজনমতো এআরভি মিলছে না। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে এআরভি দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে।
হাওড়া জেলায় মোট ১৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। রয়েছে ৪৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহের প্রতিদিনই বহির্বিভাগে চিকিৎসা হয়। আগে এখানে কুকুর-হনুমান কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে এআরভি দেওয়া হতো। কিন্তু মাসতিনেক ধরে প্রত্যন্ত এলাকায় যাঁদের কুকুর বা হনুমানে কামড়াচ্ছে, তাঁদের অনেকটা পথ উজিয়ে যেতে হচ্ছে গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তাতেও অনেক সময় প্রতিষেধক না-থাকায় রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই টিকা পাঁচ দিন ধরে নিতে হয়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতালে পাঁচ দিন যাওয়ার ধকল সামলাতে বা লম্বা লাইন এড়াতে অনেকেই ফিরে আসছেন। বাইরে থেকে চিকিৎসক দেখিয়ে ৩০০ টাকায় তাঁদের এই টিকা নিতে হচ্ছে বলে আক্রান্তেরা জানিয়েছেন।
রাস্তায় এখন বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। অথচ, গ্রামীণ এলাকায় কুকুরের বংশবৃদ্ধি আটকাতে নির্বীজকরণ হচ্ছে না। তাদের জলাতঙ্কের প্রতিষেধকও দেওয়া হয় না। এই বিষয়ে তাদের আশু কোনও পরিকল্পনাও নেই বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান। এই অবস্থায় মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো দেখা দিয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে এআরভি-র আকাল। ফলে, কুকুরে কামড়ানো লোকজন বেশ সমস্যায় পড়েছেন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অবশ্য সমস্যার সমাধানে কিছু নিদান দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এআরভি-র জোগানের স্বল্পতার জন্য আমরা সরকারি চিকিৎসকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছি। কুকুরে নখ দিয়ে একটু আঁচড়ে দিলেও অনেকে এআরভি নিতে আসেন। চিকিৎসকদের বলা হয়েছে, এমন আক্রান্তদের সঙ্গে সঙ্গে এআরভি দেওয়ার দরকার নেই। তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে কুকুরটিকে দশ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থা হোক। কুকুরটি মারা গেলে তবেই যেন ওই আক্রান্তকে এআরভি দেওয়া হয়। এ ভাবেও এআরভি-র ব্যবহার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’’ যদিও চিকিৎসকদের একাংশ ওই নিদান নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। একটি গ্রামীণ হাসাপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়া যায় না। কে কুকুরটিকে পর্যবেক্ষণ করতে যাবে?’’
সম্প্রতি আমতার ফতেপুরে একটি কুকুর ১৩ জনকে কামড়ায়। সবাইকে টিকা দেওয়া যায়নি আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে এআরভি না-থাকায়। বাকিরা বেসরকারি ভাবে গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকা নেন। কুকুরটিকেও পিটিয়ে মারা হয়। ফলে, সেটিকে আর পর্যবেক্ষণের সুযোগই পাওয়া যায়নি বলে গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান।