বুলবুলের দাপটে ভাঙল মাটির বাড়ি, গাছও

বিদ্যুতের ছেঁড়া তার সারাতে গিয়ে মৃত্যু

শনিবারের ঝড়ে মগরার বাগাটি মোড়ের কাছে রাস্তার ধারের একটি বাতিস্তম্ভ থেকে বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে পড়েছিল। রবিবার ভোরে তা মেরামত করতে যান স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় বিদ্যুৎ মিস্ত্রি সুশান্ত বিশ্বাস (৪২)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩০
Share:

বাগনানের বাইনানে ভেঙে পড়েছে গাছ। ছবি: সুব্রত জানা

বুলবুলের দাপটে হুগলির মগরায় প্রাণ গেল এক যুবকের। এ ছাড়া দুই জেলায় বেশ কিছু মাটির বাড়ি ভেঙেছে। গাছ উপড়ে বা ভেঙে পড়ায় ব্যাহত হয়েছে জনজীবন।

Advertisement

শনিবারের ঝড়ে মগরার বাগাটি মোড়ের কাছে রাস্তার ধারের একটি বাতিস্তম্ভ থেকে বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে পড়েছিল। রবিবার ভোরে তা মেরামত করতে যান স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় বিদ্যুৎ মিস্ত্রি সুশান্ত বিশ্বাস (৪২)। পুলিশ জানায়, ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া ওই তারে হাত দিতেই তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সুশান্তর। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়।

হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই দুর্যোগে জেলায় ৩৫৩টি কাঁচাবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৩০টি বাড়ির। আরও একটি বাড়িও ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের দাপটে শনিবার রাতে উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীতে জিটি রোডে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। তাতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুরকর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা গাছটিকে কেটে সরিয়ে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ওই রাতে চণ্ডীতলার গোবরা স্টেশন রোডেও একটি গাছ ভেঙে পড়ায় রবিবার সকালে যানজট হয়। গাছ কেটে সরিয়ে রাস্তা গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করতে বেলা গড়িয়ে যায়। শনিবার রাতে তারকেশ্বর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডিগ্রি কলেজের কাছেও একটি গাছ উপড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির উপরে পড়ে। গাড়িটির ক্ষতি হলেও কেউ অবশ্য
হতাহত হননি।

Advertisement

আরামবাগ মহকুমায় নদীর পাড়ে বসবাসকারী কয়েকটি পরিবারকে শনিবার রাতে ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছিল। দুর্যোগ কেটে গেলে রবিবার সকালে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঝড়বৃষ্টিতে চাষ বাদে মহকুমায় অন্য কিছুতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে প্রচুর ত্রিপলের জন্য আবেদন করা হচ্ছে।

হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বড়গাড়িয়া-১ এবং পাতিহাল পঞ্চায়েতে তিনটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে। শ্যামপুর-১ ব্লকের গাদিয়াড়ায় গঙ্গার ধারে রাস্তার উপরে রাত দেড়টা নাগাদ দশটি বড় গাছ ভেঙে পড়ে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী রাতেই সেগুলি সাফ করে দেয়। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় শ্যামপুর-১ ও ২, বাগনান-১ ও ২ এবং উলুবেড়িয়া-১ ব্লকে পঞ্চাশটিরও বেশি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। কাঁচাবাড়িতে যাঁরা থাকেন‌, তাঁদের সেখানে উঠে আসার জন্য প্রশাসনের তরফে অনুরোধ করা হয়। শনিবার রাতে ঝড়ের প্রকোপ বাড়লে ত্রাণ শিবিরে আসার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। জগৎবল্লভপুরে রাতে ১০টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়। আশ্রয় নেন প্রায় ৩০০ মানুষ। রবিবার সকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় ত্রাণ শিবির ফাঁকা হতে শুরু করে। দুপুর থেকে শিবির সরকারি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসক মুক্তা আর্য জানান।

গাদিয়াড়ায় শনিবার ঝড়ের গতি ছিল তীব্র। ঝড়ের আগাম খবরে হোটেলগুলি ছিল ফাঁকা। নৌকা-লঞ্চ দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা থাকলেও তা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। গঙ্গা এবং রূপনারায়ণ উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিডিও-রা সারারাত দফতরেই কাটান। দিনভর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরার পরে রাতে নিজের দফতরে ত্রাণ বিলির কাজ তদারক করেন জেলাশাসক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন