ফেরা: বাবার সঙ্গে সেলিমা। নিজস্ব চিত্র
একটা মাত্র শব্দ। সেই শব্দই প্রায় এক দশক পরে বাবার সঙ্গে মোলাকাত করিয়ে দিল হারিয়ে যাওয়া মেয়ের!
সম্প্রতি চন্দননগরের প্রবর্তক সেবা নিকেতন হোম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডালসা) প্রতিনিধিরা। সেখানকার বছর তেইশের সেলিমা তাঁদের কাছে আব্দার করেন, তিনি বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু কোথায় তাঁর বাড়ি? ডালসার সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায়কে মেয়েটি শুধু বলেছিল, ‘ধনুরঘাট’। অস্ফুটে বলা ওই শব্দের খোঁজে ইন্টারনেট ঘাঁটতে বসেন সৌনকবাবু। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও একটি জায়গা হতে পারে ভেবে চিঠি লিখেছিলেন ওই জেলার পুলিশ সুপারকে।
চিঠি পেয়ে খোঁজ শুরু করে পুলিশ। সপ্তাহখানেক আগে কুলতলি থানার পুলিশ সেখানকার সোনাটিকরির নগলড়া-১ গ্রামে গিয়ে পেশায় ঘরামি জসিমুদ্দিন মণ্ডলের খবর পান। জসিমুদ্দিন পুলিশকে জানান, তাঁর মেয়ে সেলিমা হারিয়ে গিয়েছে বছর দশেক আগে। সেই খবরে দুয়ে দুয়ে চার করে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার চন্দননগরের ওই হোমে আসেন জসিমুদ্দিন। বাবাকে দেখেই চিনতে পেরে জড়িয়ে ধরেন সেলিমা। শুরু হয় ঘরের ফেরার তোড়জোড়। সোমবার বাবা-মেয়েকে ডালসার দফতরে নিয়ে আসেন হোমের সুপার কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় এবং কাউন্সিলর তনিমা দে। সৌনকবাবুর কথায়, ‘‘মেয়েটির বলা জায়গার নামের সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের একটা মিল পেয়েছিলাম। তাই ওই জেলার পুলিশকে বলি। দেখা যায়, সেলিমার বাড়ি ওই জেলাতেই। পুলিশই ঠিকানা খুঁজে বের করে।’’
মেয়েকে ফিরে পেয়ে জসিমুদ্দিন জানান, ছোট থেকেই সেলিমা মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিল। ছোটবেলায় ওর মা মারা যায়। এর পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেলিমাকে এক পরিচিতের মাধ্যমে কলকাতায় পাঠান এক চিকিৎসকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজের জন্য। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয় সেলিমা।’’ পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ঠাঁই হয় কলকাতার সুকন্যা হোমে। সেখান থেকে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে চন্দননগরের প্রবর্তক সেবা নিকেতনে আসেন সেলিমা।
হোম-কর্তৃপক্ষ জানান, সে ভাবে কথা বলতে পারতেন না মেয়েটি। হোমে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা হয়। কাউন্সেলিং চলে। এখন অবশ্য সেলিমা অনেকটাই সুস্থ। একটু-আধটু পড়াশোনাও শিখেছেন।
কৃষ্ণাদেবী, তনিমাদেবীর কথায়, ‘‘সেলিমা চলে যাবে ভেবে মনটা খারাপ লাগছে। তবে ও যে বাড়িতে ফিরতে পারছে সেটা অনেক বেশি আনন্দের।’’