আতঙ্ক এলাকায়, প্রশ্ন পুরসভার ভূমিকা নিয়ে 

ডেঙ্গিতে বৃদ্ধার মৃত্যু চুঁচুড়ায়

দু’বছর আগে এই জেলার শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি ‘মহামারি’ হয়েছিল। গত বছরেও উত্তরপাড়া, বৈদ্যবাটী, রিষড়া-সহ কয়েকটি জায়গা থেকে ডেঙ্গির খবর মিলেছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে হুগলির সমস্ত পুরসভা এবং পঞ্চায়েতকে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৩
Share:

সন্ধ্যাদেবী। নিজস্ব চিত্র

রেহাই মিলল না এ বারও। বর্ষার মরসুমের শেষ পর্বে এসে ডেঙ্গি হানা দিল হুগলির জেলাসদরে। মৃত্যু হল চুঁচুড়ার ধরমপুরের সন্ধ্যা চক্রবর্তী (৬৩) নামে এক বৃদ্ধার। জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর ছেলে।

Advertisement

দু’বছর আগে এই জেলার শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি ‘মহামারি’ হয়েছিল। গত বছরেও উত্তরপাড়া, বৈদ্যবাটী, রিষড়া-সহ কয়েকটি জায়গা থেকে ডেঙ্গির খবর মিলেছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে হুগলির সমস্ত পুরসভা এবং পঞ্চায়েতকে ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক করেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব রকম ব্যবস্থাই নিতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও এ বারেও মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো গেল না। এতে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সন্ধ্যাদেবী ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার বেলেঘাটা আই়ডি হাসপাতালে তিনি মারা যান। এর পরেই আতঙ্ক ছড়ায় ওই এলাকায়। বৃদ্ধার বাড়ি লাগোয়া একটি আগাছা ভরা জলাজমি রয়েছে। সেটি মশার আঁতুড়ঘর বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের আরও অভিযোগ, সন্ধ্যাদেবীর মৃত্যুর পরে পুরকর্মীরা এলাকায় জঞ্জাল সাফাইয়ে নামেন। আগে তাঁরা সে ভাবে সক্রিয় হননি। আর এখন ব্লিচিং পাউড়ার ছড়ানো হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোথাও মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়নি।

Advertisement

বেহুঁশ: পারলৌকিক কাজের জন্য তৈরি হয়েছে প্যান্ডেল। পাশেই জমে রয়েছে আগাছা। নজর নেই পুরসভার। নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ মানতে চাননি ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমিত ধর। তাঁর দাবি, ‘‘ডেঙ্গি থেকে রক্ষার জন্য পুরস ভার পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। মাঝেমধ্যেই সচেতনতা শিবিরও করা হয়।’’ তা হলে কী করে ওই বৃদ্ধা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেন? অমিতের কাছে এর উত্তর মেলেনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, এলাকায় যাতে ডেঙ্গি না-ছড়ায় সে জন্য নজরদারি চালানো হচ্ছে। পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা জানতে পেরেছি। মৃতার বাড়ির সামনে যে জলাজমির কথা বলা হচ্ছে, সেটি ওই পরিবারেরই মালিকানাধীন। তা পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল। ওঁরা গুরুত্ব দেননি। এ বার পুরসভার উদ্যোগে বিশেষ যন্ত্রের সাহায়্যে ওই জলাশয়-সহ শহরের সব জলাশয় পরিষ্কার করা হবে।’’ দেরিতে ঘুম ভাঙার কথা মানতে চাননি পুরপ্রধানও।

সন্ধ্যাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেটের রোগ ও জ্বর হওয়ায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গির কথাই জানিয়েছেন।

সন্ধ্যাদেবীর বড় ছেলে বাসুদেব গত মঙ্গলবার জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে মায়ের মৃত্যু হবে, ভাবতেই পারছি না। এখন আমারও ভয় লাগছে। জানি না কী হবে। সব রকম পরীক্ষা চলছে।’’ আতঙ্কে রয়েছেন ধরমপুরের বহু বাসিন্দাও। তাঁদের মধ্যে অসীমা দাসের ক্ষোভ, ‘‘সন্ধ্যাদেবীর মৃত্যুর পরে পুরসভার নানা উদ্যোগ দেখছি। আগে তো যে সব বাড়ি পয়সা দিত, শুধু সেই সব বাড়ির সামনের জঞ্জাল পরিষ্কার করা হত। বাকি এলাকায় আবর্জনা থেকে যেত। মশার উৎপাতে আমরা অতিষ্ঠ। পুরসভাকে মশা মারতে আসতেও দেখিনি।’’ বাবাই কর্মকার নামে আর এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে মৃত্যু হলে তবেই পুরসভার উদ্যোগ নজরে পড়ে। এখানে দীর্ঘদিন নর্দমা পরিষ্কার হয় না। সন্ধ্যার পরে মশার জন্য ঘরে থাকতে পারি না। ডেঙ্গি রোধে যে সব উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবে কিছু হতে দেখিনি।’’

পুরসভা ডেঙ্গি রোধে নতুন উদ্যমে নামার কথা বলেছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চট্ট্যোপাধ্যায়ও নজরদারি চালানোর কথা বলছেন। তবু, এলাকাবাসীর আতঙ্ক যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন