নিকাশি বেহাল, বর্ষা হলেই শহর ভাসে

বর্ষা এলেই রাতের ঘুম উবে যায় বৃদ্ধ রামলাল রায়ের। জলে ডুবে যায় তাঁর বাড়ির মেঝে। হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক রাউলেরও একই সমস্যা। এক হাঁটু জল ছাপিয়ে ঢুকতে হয় নিজের বাড়িতে।

Advertisement

নুরুল আবসার

বাগনান শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

আর্বজনা জমে বন্ধ নিকাশি পথ। বাগনান বাসস্ট্যান্ডের কাছে ছবি তুলেছেন সুব্রত জানা।

বর্ষা এলেই রাতের ঘুম উবে যায় বৃদ্ধ রামলাল রায়ের। জলে ডুবে যায় তাঁর বাড়ির মেঝে।

Advertisement

হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক রাউলেরও একই সমস্যা। এক হাঁটু জল ছাপিয়ে ঢুকতে হয় নিজের বাড়িতে।

রামলালবাবু বা অশোকবাবুর মতো বাগনানের অনেক বাসিন্দাকেই ভুগতে হয় গোটা বর্ষার মরসুমে। কেননা, শহরের বিস্তীর্ণ এলাকাতেই জল জমে যায়। তা নামতে সময় নেয়। নানা প্রয়োজনে যাঁদের বাগনান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ডাকঘর বা বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়, একই সমস্যায় পড়েন তাঁরাও।

Advertisement

অথচ, বছর কুড়ি আগেও পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। বাগনান স্টেশনের উত্তর দিকে ছিল রেলের নয়ানজুলি। শহরের জল এসে পড়ত নয়ানজুলিতে। নয়ানজুলি বাহিত হয়ে সেই জল চলে যেত পশ্চিমে রূপনারায়ণে এবং পূর্বে দামোদরে। শহরে জল জমতই না। কিন্তু সে সব আজ ইতিহাস।

আটের দশকের গোড়ায় তৈরি হয় বাগনান বাসস্ট্যান্ড। তার ধারে দু’টি বাজার চত্বর। একটি বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে। অন্যটি বেসরকারি উদ্যোগে। বাগনানের নিকাশি সমস্যার শুরু তখন থেকেই। বাসস্ট্যান্ড তৈরির পর রেলের নয়ানজুলি বুজিয়ে দোকান তৈরির ধুম পড়ে। বর্তমানে বাগনান মাছ আড়ত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি যে বাণিজ্যিক চত্বর তৈরি করেছে, সেই পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশে নয়ানজুলি নেই বললেই চলে। সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়া ওই অংশেই শহরের জল গিয়ে পড়ে। কিন্তু তার জল ধারণ ক্ষমতা এতটাই কম যে, সেখান দিয়ে সব জল বেরোয় না। মুরালিবাড় এলাকায় নয়ানজুলি কিছুটা অবশিষ্ট থাকলেও তা পানায় পূর্ণ। তার উপরে এই নয়ানজুলির উপরেই তৈরি হয়েছে দু’টি রাস্তা। একটি পরিচিত ওয়ানওয়ে রোড হিসেবে। অন্যটি বাগনান রেল উড়ালপুলের নীচের সার্ভিস রোড। এই দু’টি রাস্তার নীচে দু’টি কালভার্ট তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই দু’টি কালভার্ট এতটাই সংকীর্ণ যে তা দিয়ে জল নিকাশি হয় না বললেই চলে।

এই যেখানে অবস্থা, সেখানে সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়া নয়ানজুলিতে আবর্জনাও ফেলেন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দোকানিরা। বাসস্ট্যান্ডের পিছন দিক যেন নরককুণ্ড!। খাবারের দোকান এবং ওষুধের দোকানের বর্জ্য, প্লাস্টিকে পূর্ণ হয়ে থাকে নয়ানজুলি। সামান্য ফাঁকা অংশ দিয়ে তির তির করে যায় নোংরা জল। নয়ানজুলিতে ময়লা ফেলার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন দোকানদারেরা। বাসস্ট্যান্ডের একটি রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের দাবি, শহরে জঞ্জাল ফেলার জায়গা না থাকায় তাঁরা দোকানের বর্জ্য বাসস্ট্যান্ডের পিছনে ফেলেন।

পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে অবশ্য প্রতি বছর বর্ষার আগে নয়ানজুলি থেকে ময়লা তোলা হয়। তবে সেই প্রচেষ্টা সিন্ধুতে বিন্দুর মতো। কিছুটা ময়লা তোলা হলেও পরক্ষণেই ফের ভর্তি হয়ে যায় নয়ানজুলি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, শহর বেড়ে যাওয়ার ফলে নিচু জায়গা বুজিয়ে বাড়ি তৈরি হয়েছে ভুরি ভুরি। শহরের ভিতরের ছোট ছোট নিকাশি নালাগুলি বোজানো হয়েছে অবাধে। তার ফলেই বর্ষা নামার সঙ্গে সঙ্গে শহর ডুবতে থাকে। রামলালবাবুর কথায়, ‘‘এমনিতে তো দোকানের ময়লা। তার উপরে বর্ষার সময়ে সেই ময়লা-সহ জল ঘরে ঢুকে যাওয়ায় দুর্গন্ধে টেকা যায় না। বারণ করলে দোকানদারেরা আমাদের উপরে চড়াও হন।’’ অশোকবাবু বলেন, ‘‘রেলের যে নয়ানজুলি এক সময়ে দামোদর ও রূপনারায়ণের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করত, তাকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শহরের যে সব ছোট নিকাশি নালা বুজে গিয়েছে তা সংস্কার করতে হবে। তবেই বর্ষার সময় শহরের জলবন্দি দশা কাটবে। এ জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান দরকার।’’

বাগনানের নিকাশি সমস্যার সমাধানে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন এলাকার বিধায়ক অরুণাভ সেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই আন্টিলা খাল কাটানো হয়েছে। সেই খালের সঙ্গে সংযোগকারী আরও একটি খাল কাটা হচ্ছে। সেটিকে যুক্ত করা হবে দুর্লভপুরে রেলের নয়ানজুলির সঙ্গে। এ ছাড়া, মাছ আড়তের কাছে স্টেশন রোডে একটা কালভার্ট আছে। সেটিরও সংস্কার করা হবে। অন্যদিকে, বাসস্ট্যান্ডের পিছনে জঞ্জাল পড়ে যে নয়ানজুলি বুজে গিয়েছে, সেটি কাটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, এ জন্য রেলের অনুমতি দরকার। অনুমতি চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাজগুলি হলে বাগনানের নিকাশি সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।

বিধায়কের এই সব উদ্যোগের কথাই আপাতত ভরসা শহরবাসীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন