চিল উড়লে তবেই ভাসান

প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে ওই মন্দিরে দেবী চণ্ডীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মন্দিরের বর্তমান সেবাইতেরা জান‌ান, জটাধারী চক্রবর্তী নামে তাঁদের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেলাইচণ্ডী মন্দির তৈরি করেছিলেন। তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় চণ্ডীর মূর্তি। তার পর থেকে সারা বছর চণ্ডীর নিত্যপুজো হয়।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share:

সাবেক: আমতার মেলাইচণ্ডী মন্দির। নিজস্ব চিত্র

দেবী দুর্গার কোনও আলাদা মূর্তি নেই। হয় ঘটপুজো। তাকে কেন্দ্র করেই উৎসবে মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। দুর্গাপুজোর চার দিন এই ছবিই দেখা যায় হাওড়ার আমতার মেলাইচণ্ডী মন্দিরে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে ওই মন্দিরে দেবী চণ্ডীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মন্দিরের বর্তমান সেবাইতেরা জান‌ান, জটাধারী চক্রবর্তী নামে তাঁদের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেলাইচণ্ডী মন্দির তৈরি করেছিলেন। তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় চণ্ডীর মূর্তি। তার পর থেকে সারা বছর চণ্ডীর নিত্যপুজো হয়। দুর্গাপুজোর সময়ে হয় ঘটপুজো। চণ্ডীর নিজস্ব পুজো হয় প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমায়।

মন্দিরের সেবাইতেরা জানান, চণ্ডী দুর্গারই একটি রূপ এবং শক্তির প্রতীক। তাই মন্দিরে আলাদা করে দুর্গার প্রতিমা বসানো হয় না। ঘট বসিয়ে তাঁকেই দুর্গারূপে পুজো করা হয়। তবে পুজোর জাঁক কোনও বড়ো বাজেটের থেকে কম নয়। পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো হয়। সপ্তমীর দিনে হয় অন্নকূট। প্রায় ১০ হাজার মানুষ খাওয়া-দাওয়া করেন। অষ্টমীতে হয় সন্ধিপুজো। দশমীতে সিঁদুর খেলা। আগে পুজোর চার দিনই পশুবলি হত। এখন শুধুমাত্র নবমীর দিনে পশুবলি হয়। বাকি দিনগুলিকে বলির প্রতীক হিসেবে ফল বলি দেওয়া হয়। দশমীতে সেবাইত পরিবারগুলির সঙ্গে আমতা শহরের বাসিন্দারা শোভাযাত্রা করে মন্দির থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উজিয়ে ধোপারঘাটে ঘট বিসর্জন করতে যান। তখন বাজি ফাটানো হয়। চলে আতসবাজির প্রদর্শন।

Advertisement

পুজোর চার দিন জ্বালানো হয় মন্দিরের নিজস্ব ঝাড়বাতি। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাদশীর দিনে হয় যাত্রা। সেবাইতেরা জানান, মন্দিরের নামে থাকা সম্পত্তির আয় থেকে পুজোর সব খরচ হয়। বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না। সেবাইতেরা জানান, একসময়ে ঘাটের ধারে গাছে চিল বসত। সেই চিল উড়লে তবেই ঘট বিসর্জন হত। এখন চিল নেই। তবুও প্রথা মেনে চিল উড়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করেন। মন্দিরের পুরোহিত ‘ওই চিল উড়ে গেল’ ঘোষণা করার পরেই ঘট বিসর্জন করা হয়। সেবাইতেরা জানান, এখন চিল দেখা যায় না বললেই চলে। তাই তবুও প্রথা মেনে পুরোহিতকে চিল ওড়ার কথা ঘোষণা করতেই হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন