ছেলে-বৌমার অত্যাচারে বেঘর, কোর্টে বৃদ্ধ দম্পতি

প্রবীর দাস নামে ওই বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী আরতি শ্রীরামপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরিঙ্গিডাঙার বাসিন্দা।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৬:৩৩
Share:

আরতি ও প্রবীর দাস। নিজস্ব চিত্র।

ছেলে-বৌমার অত্যাচারে বাড়িছাড়া হতে হয়েছে, এই অভিযোগে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন শ্রীরামপুরের এক বৃদ্ধ দম্পতি। শ্রীরামপুর আদালত পুলিশকে এফআইআর রুজু করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

প্রবীর দাস নামে ওই বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী আরতি শ্রীরামপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরিঙ্গিডাঙার বাসিন্দা। প্রবীরবাবু অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী। ছেলে প্রসেনজিৎ সিভিক ভলান্টিয়ার। দম্পতির অভিযোগ, পাঁচ বছর আগে মেঘা দলুই দাস নামে ১৪ বছরের এক নাবালিকাকে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। নাবালিকাকে পূত্রবধূ হিসেবে তাঁরা মেনে নেননি। স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে ওঠেন প্রসেনজিৎ। মেঘা সাবালিকা হলে প্রসেনজিৎ তাঁকে নিয়ে গত বছরের অগস্ট মাসে নিজের বাড়িতে এসে ওঠেন। দোতলায় থাকতে শুরু করেন। তখন থেকেই প্রবীরবাবু, আরতিদেবী এবং তাঁদের মেয়ের উপরে প্রসেনজিৎ-মেঘা মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ।

আদালতকে আরতিদেবী আরও জানিয়েছেন, বসতবাড়ি লিখে দেওয়ার জন্য স্বামীর উপরে চাপ সৃষ্টি করেন ছেলে-বৌমা। রাজি না-হওয়ায় অত্যাচার, মারধর চলে। বোনের সম্মানহানি পর্যন্ত করেছেন প্রসেনজিৎ। মাসকয়েক আগে তাঁদের তিন জনকে মেরে রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়। মার খেয়ে প্রবীরবাবু হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর পর থেকেই তাঁরা বনগাঁয় আত্মীয়ের বাড়িতে মাথা গুঁজেছেন।

Advertisement

বৃদ্ধের অভিযোগ, বিষয়টি শ্রীরামপুর থানা, চন্দননগর কমিশনারেটে জানানো হলেও সুরাহা হয়নি। আরতিদেবীর আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালত আমার মক্কেলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি এফআইআর করে তদন্ত করতে বলেছে পুলিশকে। প্রবীরবাবু এবং আরতিদেবী দু’জনেই বার্ধক্যে পৌঁছেছেন। ওঁরা অসুস্থ। অসহায় অবস্থায় ওঁদের দিন কাটছে।’’

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্রসেনজিৎ বিশেষ কিছু বলেননি। তবে মেঘা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। গত এপ্রিল মাসে তিনি শ্রীরামপুর থানা এবং চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগও দায়ের করেন। আদালতেরও দ্বারস্থ হন।

মেঘার দাবি, শ্বশুর, শাশুড়ি-সহ শ্বশুরবাড়ির অন্য আত্মীয়েরা তাঁকে জাত তুলে খোঁটা দিতেন। ‘নিচু’ জাতের মেয়ে হওয়ায় তাঁকে ঘরে তোলা হয়নি। সেই কারণেই তাঁরা ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। ঘরভাড়া দেওয়া কঠিন হচ্ছিল বলে প্রসেনজিৎ তাঁকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরেন। মেঘার মায়ের দেওয়া দেড় লক্ষ টাকায় দোতলায় ঘর করে থাকতে শুরু করেন। মেঘার অভিযোগ, ‘‘নিচু জাতের মেয়ে বলে আমার উপরে খুবই মানসিক নির্যাতন করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। আমি কোনও জিনিস ধরলে ওঁরা স্পর্শ করতেন না। আমাকে মারধর, গালিগালাজ করা হতো। আমার পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আমি আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছি। এখনও বিচার পাইনি।’’

অত্যাচার করে থাকলে শ্বশুর-শাশুড়ি বাড়ি ছাড়লেন কেন?

মেঘার জবাব, ‘‘আমাকে হেনস্থা করতেই ওঁরা স্বেচ্ছায় অন্যত্র থাকছেন। আমরা ওঁদের উপরে কোনও অত্যাচার করিনি। সবাইকে নিয়েই সংসার করতে চেয়েছিলাম।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আলাদলতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন