বলাগড়ের গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে বিধায়ক

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ফের চাষির মৃত্যু

খানাকুলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলাগড়ে। খেতে জল দিতে গিয়ে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারের ছোঁয়া লেগে মারা গেলেন এক চাষি। বৃহস্পতিবার সকালে বলাগড়ের একতারপুর পঞ্চায়েতের সারেন্ডা গ্রামের ঘটনায় মৃতের নাম দীনবন্ধু ঘোষ (৫৫)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলাগড় শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৯
Share:

অগ্নিগর্ভ: মৃতদেহ ঘিরে বিক্ষোভ এলাকার বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র।

খানাকুলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলাগড়ে।

Advertisement

খেতে জল দিতে গিয়ে বিদ্যুতের ছেঁড়া তারের ছোঁয়া লেগে মারা গেলেন এক চাষি। বৃহস্পতিবার সকালে বলাগড়ের একতারপুর পঞ্চায়েতের সারেন্ডা গ্রামের ঘটনায় মৃতের নাম দীনবন্ধু ঘোষ (৫৫)। বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির প্রতিবাদে এবং মৃতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে বেশ কয়েক ঘণ্টা দেহ আটকে বিক্ষোভ চলল। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকার তৃণমূ‌ল বিধায়ক ঘটনাস্থলে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১২টা নাগাদ দীনবন্ধুবাবু নলকূপ থেকে জল তুলে বাড়ির কাছের খেতে জল দিতে যান। জমিতেই একটি বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার ছিড়ে মাটিতে পড়েছিল। তাতেই কোনও ভাবে ছোঁয়া লাগে তাঁর। তড়িদাহত হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ভোরে খুঁটির পাশে তাঁর দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। ঘটনার কথা চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। কয়েকশো মানুষ জড়ো হয়ে যান। শুরু হয় বিক্ষোভ।

Advertisement

খবর পেয়ে বলাগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু মৃতদেহ উদ্ধারে পুলিশকে বাধা দেন স্থানীয়রা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে এসে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিতে হবে। পাশাপাশি, মাঠেঘাটে তার ছিঁড়ে পড়ে থাকলে তা মেরামত করা এবং নজরদারি চালানোর দাবিও ওঠে। শেষে বিধায়ক অসীম মাঝি ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁর আশ্বাসে বেলা ১০টা নাগাদ বিক্ষোভ থামে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

মৃতের তিন মেয়ের সকলেই বিবাহিত। বড় মেয়ের কথায়, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতির জন্যই বাবাকে অকালে মরতে হ‌ল। এখন আমার মা আর ঠাকুমার কী করে চলবে? ওরা ক্ষতিপূরণ দিক।’’ বিধায়ক অসীমবাবু বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি নিয়ে আমি বিদ্যুৎ দফতরের ডিভিশনাল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছি।’’

দিন কয়েক আগে খানাকুলের মমকপুরেও মাঠে ধান কাটতে গিয়ে ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক চাষির মৃত্যুকে ঘিরে এলাকা তপ্ত হয়ে ওঠে। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির গাড়ি ভাঙচুর করে জনতা। দফতরের দুই কর্মীকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। পরপর দু’টি ঘটনায় ওই দফতরের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একতারপুরের অনেক চাষিরই অভিযোগ, মাঠেঘাটে ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না।

বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকরা অবশ্য অভিযোগ মানেননি। সোমরা বাজার গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই দফতরের স্টেশন ম্যানেজার অভিষেক সরকার জানান, গত রবিবার ঝড়ে ওই এলাকায় ২০টিরও বেশি বিদ্যুৎস্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলি সারানোর কাজ চলছে। আর, সারেন্ডা গ্রামে খুঁটির সংযোগ থেকে তার খুলে পড়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালেই বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। এ দিনই সেটি সারানোর কাজও শুরু করা হয়। অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

হুগলি জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হারাধন বাগ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক ডাকা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টাও
করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন